পা দিয়ে লেখা বই উপাচার্যকে উপহার দিলেন তামান্না

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার নূরার লেখা বই 'ইচ্ছের আলো' বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে উপহার দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে উপাচার্যের নিজস্ব কার্যালয়ে এই বই উপাচার্যের হাতে তুলে দেন তিনি। 

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা অদম্য এক মেয়ে তামান্না আক্তার নুরা। জন্ম থেকে দুইটি হাত ও ডান পা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাঁ পা দিয়ে লেখেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পয়ে উত্তীর্ণ। তার এই সাফল্যে মুঠোফোনে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে এক পায়ে লেখে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। এবার এক পায়ে 'ইচ্ছের আলো' বই লেখে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন তিনি।

তামান্নার প্রকাশিত বই 'ইচ্ছের আলো' হাতে পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তামান্নার লেখা 'ইচ্ছের আলো' বইটি আজ সে আমাকে উপহার দিয়েছে। তার লেখা প্রথম বইয়ের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। বইটি লেখার মাধ্যমে  তামান্না দেখিয়ে দিয়েছে শারীরিক অক্ষমতাকে কিভাবে অতিক্রম করে সমাজে জায়গা করে নেওয়া যায়। তার এই সৃষ্টিশীল অদম্য শক্তি দেশের শারীরিকভাবে অক্ষম শিশুসহ সকল বয়সের মানুষদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তাদের জন্য তামান্না এখন একটি অনুপ্রেরণা ও স্বপ্নের নাম। 

তিনি আরও বলেন, সফলতা অর্জনের জন্য লক্ষ্য স্থির করে তার উপর অটল থাকলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা লাভ করা সম্ভব। দেশের ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাতে পরিণত করতে তামান্না একটি রোল মডেল। তামান্নার পা দিয়ে লেখা অনেক সুন্দরই নয়, তার পা দিয়ে আঁকা দৃশ্যগুলো যে কাউকেই বিস্মিত করবে। তামান্না তার সুপ্ত প্রতিভা ও অদম্য শক্তি ব্যবহার করে যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, সেই পথে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। সর্বোপরি তার মঙ্গল ও সফলতা কামনা করছি। শারীরিক অক্ষমতা দূর করে তামান্না এগিয়ে যাক তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে।

তামান্না বলেন, আপনারা অনেকেই আমার কথা শুনেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। 'ইচ্ছের আলো' নামক একটি বই লেখেছি। এই বইটিতে তুলে ধরেছি, সফলতা লাভ করতে মানুষের শারীরিক অক্ষমতা  কখনো বাধা হতে পারেনা। ইচ্ছা শক্তির দ্বারা অনেক কিছু জয় করা সম্ভব। আমার মতো হাজারো তামান্নারা শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, সমস্যা সমাধানে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কি কি করণীয় হবে সেগুলোই তুলে ধরেছি বইয়ে। আমার বিশ্বাস, যে সকল তরুণ-তরুণী নিজেদের নিয়ে হতাশার সাগরে ডুবে আছে তাদের জন্য এই বইটি হবে সঠিক দিকনির্দেশনা। আমার লেখা 'ইচ্ছের আলো' বইটি আজ যবিপ্রবি উপাচার্য মহোদয়কে উপহার দিতে পেরে অনেক আনন্দবোধ করছি। যখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি উপাচার্য স্যার তখন থেকেই আমার খোঁজখবর নিতেন। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, উপাচার্য স্যারের একজন ছাত্রী হতে পেরে। স্যার আমার বৃহৎ অনুপ্রেরণার অংশীদার। আমি এখানে থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করব। সর্বশেষ আমার লেখা 'ইচ্ছের আলো' বইটি সারাদেশে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে ও অনেকের জীবন বদলে দেওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে আশা করছি। 

উল্লেখ্য, বইটি প্রকাশনায় তামান্না ফাউন্ডেশন, প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ এবং বইটি এখন ২০% ছাড়ে মাত্র ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //