বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটওভার ব্রিজের অভাবে মৃত্যু ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে হয় এই ব্যস্ততম মহাসড়কটি। এই মহাসড়কে ভারি যানবাহনের চলাচল বেশি, যার প্রায় সবই দ্রুতগতিতে ও বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অথচ শিক্ষার্থীদের নিরাপদে চলাফেরার জন্য এখানে নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ, স্পিডব্রেকার থাকলেও তা সময়মতো সংস্কার না করায় প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে (ভিসি গেটে) রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূরে তাবাসসুম লামিয়া। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতরভাবে আহত হন এবং শিক্ষার্থীর দুটি দাঁত ভেঙ্গে যায় ৷

সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার পরিবার তাকে নিয়ে যায়। এর আগে গত ৯ আগস্ট  ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম রাস্তা পার হওয়ার সময় পিকআপ গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কের পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দুই ঘণ্টা যাবত অজ্ঞান ওই শিক্ষার্থীকে পরে শেরে এ বাংলা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া।

এর আগে গত (২৩ জুলাই) রবিবার ভিসিগেটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা শান্তা। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতিতে এসে শিক্ষার্থীর পায়ে মেরে দেয় একটি মোটরসাইকেল, এতে পা ভেঙে যায় ওই ছাত্রীর। পরে এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে মহাসড়কটি ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের এক সপ্তাহের মধ্যে দাবিপূরণের শর্তে সড়ক অবরোধ থেকে উঠে যায় শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই ২৪ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরিশাল জোনের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর বরাবর একটি ফুটওভার ব্রিজ ও তিনটি গেটের সামনে জরুরি ভিত্তিতে গতিপ্রতিরোধক স্থাপনের জন্য আবেদন করে। কিন্তু আবেদনের অর্ধবছরেও ফুটওভার ব্রিজ ও তিনটি গেটের সামনে গতিপ্রতিরোধক স্থাপন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত  দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে মারাত্মক দুর্ঘটনায় শিকার হলেই কেবল জানাজানি হয়। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর গোড়ায় অবস্থিত হওয়ায় সেতু ও রাস্তার সংযোগ স্থানটির ঢাল ও বাকের কারণে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণহীন। যার ফলে বারবার দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন ব্যতীত এ দুর্ঘটনার কোনো সমাধান সম্ভব নয়। ব্রিজের ঢাল থেকে নামার সময় অনেক গাড়িই নিয়ন্ত্রণহীন থাকে। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা জরুরি ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। তাই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব বলেন, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই রাস্তাটি পারাপার করতে হয়। যান চলাচলের জন্য পটুয়াখালীগামী এটিই একমাত্র সড়ক হওয়ায় অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে এই সড়কটি। অপরদিকে সড়কটি ব্রিজের ঢাল সংলগ্ন হওয়ায় যানবাহন আসা-যাওয়ার সময় অত্যন্ত গতিসম্পন্ন থাকে যা শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ইতোমধ্যেই অনেকগুলো দুর্ঘটনার সাক্ষ্য হয়েছি। দুর্ঘটনাগুলো আমাদের প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এই সড়কটি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রয়াসী হওয়া, অতিসত্তর এর স্থায়ী সমাধান করা এবং স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব সচেতন পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাবেয়া বলেন, গাড়িগুলো দ্রুতগতিসম্পন্ন হওয়ায় আমাদের মেয়েদের সমস্যা হয় বেশি। এখনো পর্যন্ত যতোগুলো দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগ শিকার হয়েছে মেয়েরা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম জানান, আমরা সড়ক ও জনপদের সাথে কথা বলেছি। আমরা তাদেরকে বিষয়টি বলেছি। কিন্তু তাদের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যেহেতু এটা ব্রিজের ঢাল তাই গতিরোধক দিলে আরো বেশি দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা বেশি। ইতোমধ্যে তারা জেব্রা ক্রসিং করা করে দিয়েছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে প্রটোকল ব্রিজের দাবি থাকবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ও সচেতন থাকা উচিত। একটু দেখেশুনে পারাপার করা উচিত।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর বরিশাল জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন  জানান, এই বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ফটকের সামনে গতিরোধক ও একটি ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের জন্য চিঠি পেয়েছিলাম। ইতিমধ্যে দুটি গতিরোধক রয়েছে, কিছুদিন আগে সেগুলোতে রঙ করা হয়েছে। আর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফুটওভার ব্রিজ এবং আরো একটি গতিরোধক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমি এসেই এ বিষয়টার দায়িত্ব হাতে নিয়েছি। এ বিষয়টি যেহেতু আমাদের হাতে নয় তাই একটু সময় লাগতেছে। আমরা মেয়র মহোদয়ের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলবো। দরকার হলে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক তৎপরতা চালিয়ে যাবো। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //