সেশনজটে নাকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট জেঁকে বসেছে। সেশনজটে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। প্রশাসনের দায়সারা আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিয়ে তিক্ততা বেড়েই চলেছে। শ্রেণীকক্ষ-শিক্ষক সংকট, একসাথে কয়েকজন শিক্ষকের শিক্ষাছুটি, সেমিস্টারে ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের গাফিলতি, শিক্ষকদের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবকে সেশনজটের কারণ হিসেবে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের আওতায় পঁচিশটি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের মধ্যে আইন বিভাগ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ ও দর্শন বিভাগে কোনো সেশনজট নেই। তবে বাকী ২১টি বিভাগের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, বাংলা বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান, কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ এবং গণিত বিভাগে তীব্র সেশনজট তৈরি হয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার পরবর্তী সময়ে সেশনজট নিরসনে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই করোনার সময়ের সেশনজট আর তার পরবর্তী সেশনজট শিক্ষার্থীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ, আইন বিভাগ, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগ তাদের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ করলেও বাকি ২২টি বিভাগ এখনো শেষ করতে পারেনি। এই বর্ষের কেউ এখনো তৃতীয়বর্ষের ক্লাস করছেন আবার কেউ ৭ম সেমিস্টার শেষ করেছেন মাত্র। একই অবস্থা দেখা যায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও। উপরোক্ত তিনটি বিভাগ চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু করলেও বাকি ২২টি বিভাগ এখনো তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পার হতে পারেনি।

সেশনজট নিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েম সুমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক শিক্ষকদের মধ্যে জব রেসপনসেবলিটি নাই। একটা বিভাগের অগ্রগতির মূল হচ্ছে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। তারা সরকারি চাকরি পেয়ে খেয়াল খুশি মতো বিভাগ চালিয়ে বিভাগের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। অগ্রগতি নাই, সমাধানের চেষ্টা নাই। দীর্ঘদিন যাবত এই মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে পড়াশোনা করতে হয় একজন শিক্ষার্থীকে।

এ প্রতিবেদনে ১৩ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, ছয়মাসের সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগে নয় মাস আবার কখনো কখনো দশ মাসও। এরপর ফলাফল ঘোষণা করতে সময় লাগে আবার ছয় মাস। এক্ষেত্রে তারা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও প্রশাসনের তদারকি অভাবকে সেশনজটের মূল কারণ হিসেবে দুষছেন। তারা বলছেন, এক বিভাগ পারলে অন্য বিভাগ কেন পারবে না।

শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসরুম সংকটের কারণে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা যথাসময়ে নিতে হিমশিম খেতে হয়। শিক্ষকসংকট থাকায় একজনকে ছয়টি ব্যাচের ক্লাস নিতে হয়। তারপরও তারা শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ে সেমিস্টার শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।

তাদের দাবি, একক একাডেমিক ক্যালেন্ডারই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসন করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা সেশনজটের অন্যতম মূল কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা । এ নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর স.ম. ইমানুল হাকিম বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাজ ফলাফল প্রকাশ করা। কিন্তু প্রস্তুত করে বিভাগ। তারা প্রস্তুত করে দিলেই কেবল আমরা তা প্রকাশ করতে পারি।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন দিল আফরোজ খানম বলেন, আমাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার ঠিক করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে নিদিষ্ট একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করেছে। প্রত্যেক বর্ষের ক্লাস একই সাথে শুরু করা আবার একই সাথে শেষ করে তারা। সাথে সাথে মানার বাধ্যবাধকতাও রাখতে হবে। তাহলেই কেবল সেশনজট নিরসন সম্ভব।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব থাকায় সিন্ডিকেট সভা, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হচ্ছে না। তাই সংকটগুলো বেড়েই চলছে। তবে রুটিন দায়িত্ব পেয়েই বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট সমস্যাগুলো সমাধান করতে দেখা গেছে। তবে বড় সংকটগুলো সমাধানে উপাচার্যের বিকল্প নাই বলছেন  শিক্ষকরা।

সেশনজট নিরসনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আশ্বস্ত করে বলেন, খুব শিগগিরই দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাবে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একক একাডেমিক ক্যালেন্ডার নিয়েও কাজ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //