জাবিতে অছাত্ররা হলে, নবীনরা অনলাইনে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮-২২ জুন। পরীক্ষা শেষে ভর্তি কার্যক্রম গত ১৬ আগস্ট শুরু হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। ইতোমধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে শ্রেণিকার্যক্রম শুরু হয়ে গেলেও জাবিতে শুরু হয়নি। 

ভর্তি পরীক্ষার প্রায় পাঁচ মাস পরেও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাযন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাথে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) মান রাখতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ৩০ নভেম্বর থেকে অনলাইনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তবে এসব বিষয়কে সামনে না এনে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া হলগুলোতে জনবল নিয়োগ হয়নি এবং বিদ্যমান হলগুলোতে আবাসন সংকটের কারণ দেখিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সশরীরে শুরু করতে পারছে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ৫(ট) ধারা অনুসারে, স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার সাত দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আবাসিক হল ত্যাগ করার বিধান রয়েছে। এর ব্যতয়ে প্রশাসন পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। হলগুলোতে ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব শেষ হলেও অনেকে আবাসিক হলে অবস্থান করছেন। এসব শিক্ষার্থীর অবৈধভাবে হলে অবস্থানের কারণে বাড়ছে আবাসন সংকট। তবে এসব শিক্ষার্থীদের বের করতে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই কতৃর্পক্ষের। হলের নোটিশবোর্ড ও বিভিন্ন দেয়ালে বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কার্যক্রম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সশরীরে শুরু, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার ও ২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা দ্রুত নেওয়ার দাবিতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু তাতেও নিরব কর্তৃপক্ষ। 

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ ভালো গবেষক তৈরি করা, শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। কিন্তু জাবি প্রশাসন যেসকল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যায় সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত। প্রশাসন বাৎসরিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তোড়জোড় করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। অথচ তারা ভর্তি পরীক্ষার পরে ছয় মাস শিক্ষার্থীদের ঘরে বসিয়ে রেখেছে। 

প্রথমবর্ষের শ্রেণিকার্যক্রম সশরীরে শুরু করতে না পারার সমলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, অছাত্রদের হল থেকে বের করে দিলে ছিট সংকট অনেকাংশে কমে যাবে কিন্তু অছাত্রদেরকে হল থেকে বের করার কোনো উদ্যোগই প্রশাসন নেয়নি। তারা অছাত্রদের বের করার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু চিঠি দিলে ছাত্ররা বের হবে না এটা তারা নিজেরাও জানে। তাই নতুন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার এই ব্যর্থতা সম্পূর্ণ প্রশাসনের। হল তৈরিতে তাদের আগ্রহ কিন্তু হলে ছাত্রদের হলে উঠানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। 

নবীন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকার্যক্রম কবে থেকে সশরীরে শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব আলী রেজা বলেন, অফলাইনে কত তারিখে ক্লাস শুরু হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল জানুয়ারিতে প্রবেশিকা অনুষ্ঠান করার। এরপর আর নতুন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //