নজরুলের ক্যাম্পাসেই অবহেলিত নজরুল

২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং নজরুল ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের টেন্ডার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের সাথে। টেন্ডারে উল্লেখিত চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসে ভাস্কর্য দুটির সব কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা এখনো রয়ে গেছে অসম্পূর্ণ। 

তবে নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখেই নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর ২০২১ সালের ২৫ মে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে ‘নজরুল ভাস্কর্যের’ উদ্বোধন ঘোষণা করেন সে সময়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান। জানা যায়, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কাজের অসম্পূর্ণতা ঢাকতে ভাস্কর্যটি সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সম্পূর্ণ বেদি ঢেকে দেওয়া হয় লালগালিচা দিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের কাজ সম্পন্ন হয়ে আলোকসজ্জা দিয়ে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ভাস্কর্যটি সাজানো থাকলেও এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে নজরুল ভাস্কর্যের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের পেছনে নির্মাণাধীন এ নজরুল ভাস্কর্যের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কাজ গুটিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশন। 

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা এ কাজ সম্পন্ন ও ভাস্কর্য পরিপূর্ণ করার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বারবার দাবি উঠলেও বাজেটের দোহাই দিয়ে সেটি এড়িয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে ওই প্রকল্প নির্মাণে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। দুটি ভাস্কর্যের বেদি নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ৪২ লাখ টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এখন অব্দি ছয় বছর অতিবাহিত হলেও এখনো হাসির মুখ দেখেনি দুখু মিঞা। সূর্য ডোবার সাথে সাথে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় নজরুল ভাস্কর্য। হয়নি লাইটের ব্যবস্থাও। এমনকি আলোকিত হয়নি গত ২৫ মে উদযাপিত কবির ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতেও। ভাস্কর্যের আশপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঝুপড়ি দোকান। যার উচ্ছিষ্ট প্রতিনিয়ত দূষিত করে যাচ্ছে নজরুল ভাস্কর্যের পরিবেশ। বিভিন্ন জাতীয় দিনগুলোতেও অনাদর-অবহেলায় নিমজ্জিত হয়ে থাকে এ ভাস্কর্য।

প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কাজ বন্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জিএম নুরুল করিম স্বপন বলেন, আমার কাজ শেষ। বিভিন্ন কাজ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এখনো আমি ১০ লাখ টাকা পাব। তারা আমাকে টাকা পরিশোধ করছে না। আমি ওখানে ঢালাই করেছি, ইট লাগিয়ে দিয়েছি। বাকি কাজ বিশ্ববিদ্যালয় যাকে দিয়ে করাতে চায়, তাকে দিয়েই করাক। আমার টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়।

কাজ শেষ হয়নি- এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, ততটুকু শেষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ আছে। আমরা অর্থ পেলে কাজ শুরু করব। আমাদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল বলে এত টাকা খরচ হয়েছে। শেষ হতে আরও কত টাকা লাগবে আপাতত ভাবছি না। কাজ যখন শুরু করব তখনকার বাজারদরে হিসাব করতে হবে। ভাস্কর্যের কাজ কবে শুরু করব আপাতত বলতে পারছি না।

তবে আশার বার্তা পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের সাথে কথোপকথনে। তিনি বলেন, আমি আসার অনেক আগেই ভাস্কর্য দুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কাজটি কেন সম্পন্ন করতে পারেনি, সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যেকোনো কাজ শুরু করলে তা সম্পন্ন করতে হয়। তা না পারলে কাজে হাত দেওয়া উচিত নয়। আমি আসার পরেই এই কাজের স্থবিরতা সম্পর্কে অবগত আছি। আগামী বছরের মধ্যে আমরা ভাস্কর্য দুটি সম্পূর্ণ করতে চাই।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশাল উপজেলার নামাপাড়া এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত আছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত ও তার স্মৃতি বিজরিত বটতলা ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার জন্মের ১৮ বছরে সমাজকে দিয়েছে বহু প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষিত জাতি। তাই নজরুলের অস্তিত্ব রক্ষায় ও তার স্মৃতি চর্চায় নজরুল ভাস্কর্যের কাজের সমাপ্তি এখন সময়ের দাবি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //