রাবির হলে ফের খাবারে দাম বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

আবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবশেষ গত ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভায় দুপুর ও রাতের খাবারে মোট ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে আবাসিকহলগুলোর ডাইনিংয়ে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ নিয়ে গত দেড় বছরে দুই দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাবারের মান বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ডাইনিংগুলোতে দুইবেলার খাবার মিলিয়ে ১৮ টাকা বৃদ্ধি করা হলো। এদিকে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলে ২০২২ সালের ১ জুলাই দুই বেলার খাবারে মোট ৮ টাকা বৃদ্ধি করে প্রশাসন। এর আগে দুপুরের খাবারের কুপনের দাম ছিল ২৪ টাকা। পরে সেটি হয়েছে ২৮ টাকা। একইভাবে রাতের খাবার ১৮ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আগে ২ টাকায় বিভিন্ন ভর্তা পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে সেগুলোর দাম আরো ৩ টাকা বৃদ্ধি করে ৫ টাকা করা হয়।

পরে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভার ৪ নম্বর সিদ্ধান্তে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি হলগুলোতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সকল হলে ডাইনিংয়ে দুপুরের খাবারের দাম ৩৫ টাকা এবং রাতের খাবার ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। নতুন এ সিদ্ধান্তে দুই বেলা খাবারে মোট ১০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেল।

এদিকে খাবারের দাম বাড়ানোর বিষয়টি গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এই সিদ্ধান্তটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক একটি গ্রুপে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, প্রতিবার খাবারের মান বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু এতে খাবারের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। খাবারের মান বৃদ্ধির কথা বলে খাবারের দাম বাড়ানো, এটা একটা কৌশল মাত্র। খাবারে ভর্তুকি দিয়ে মান বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

মিজান শেখ নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রতিবার খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলে দাম বাড়ায়। খাবারের মান আগে যা ছিল- তাই থাকে, মাঝখান থেকে শুধু খাবারের দাম বৃদ্ধি পায়। যারা হল প্রভোস্ট, তারা কাদের জন্য? ছাত্রদের নাকি ডাইনিং কর্মচারীদের?’ 

অর্জুন তালুকদার নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘খাবারের মান বৃদ্ধি, দাম বাড়ানোর একটা কৌশল মাত্র। এটা বলে প্রতিবার শিক্ষার্থীদের ধোঁকা দেওয়া হয়।’

প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই স্বেচ্ছাচারিতা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ব মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা। শিক্ষার্থীরা ক্ষুধা নিবারণের জন্যই পুষ্টিহীন ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের যখন নাভিশ্বাস উঠে গেছে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ।  

জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ডাইনিং কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডাইনিং পরিচালনা করছেন। তারা অনেকদিন ধরে খাবারের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের কথা চিন্তা করে দুইবেলা খাবারে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে খাবারের মান অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে শিক্ষার্থী, ডাইনিং কর্মচারী ও প্রাধ্যক্ষদের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করে নেওয়া দরকার ছিল। শিক্ষার্থীদের ওপর জোর করে কোনো কিছু যেন চাপিয়ে না দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহবায়ককে বলা হয়েছে। আর ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো বাজেট নেই। ইউজিসিকে বারবার বলার পরেও তারা এই খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে না। আবার এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করাও নিষেধ। তবে আমরা ভর্তুকি যে দিই না, বিষয়টি এমন না। বাবুর্চি ও ডাইনিং কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। তাদের চাকরিটা সরকারি হলে ওই টাকাটা ডাইনিংয়ের খাবারে দেওয়া যেতো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //