সফলতার ৫৪ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ছিল শুক্রবার (১২ জানুয়ারি)। প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর পেড়িয়ে ৫৪ তে পা রাখল দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দীর্ঘ এই পথ চলায় নানা চড়াই উৎরায় পেরিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয়। সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত ঢাকার অদূরেই সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে চলুন জেনে আসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এতে অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ও শিক্ষিতজন একটি আবাসিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। পাকিস্তান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরি করে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যকরী সংসদ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার সালনায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারের নির্জন পরিবেশে নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়। ঢাকা—আড়িচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. সুরত আলী খানকে। বাস্তুকলাবিদ প্রকৌশলী সংস্থা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ করে।

১৯৬৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বনাম জাহাঙ্গীরনগরের সাথে মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।

১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি প্রকল্প আকারে পরিচালিত হয়। প্রকল্পের শুরুতে এ বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৪টি বিভাগে (অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান) ১৫০ জন ছাত্র ও ২৩ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সেসময় দেশের সামগ্রিক অবস্থা খারাপ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কাজ বন্ধ ছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের শুরু দিকে বিশ্ববিদ্যালয় আবার নবরূপে যাত্রা শুরু করে।  

১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করা হয়। এ অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে জমির পরিমাণ ছিল ৭৪৮.১৪ একর। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ৫০ একর জমি দিয়ে দেওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬৯৭.৫৬ একর। 

বিভাগ ও ইনস্টিটিউট 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। ইনস্টিটিউটগুলো হলো— ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ—জেইউ), ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং ও বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট। এছাড়া রয়েছে ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট—বড় স্থাপনায় ভরপুর। চেতনার বজ্রদীপ্ত কণ্ঠে ঠায় দাড়িয়ে ‘অমর একুশ’ যা ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত, অকুতোভয় ‘সংশপ্তক’ যা মহান স্বাধীনতার পরিচয় বহন করে, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, জহির রায়হান অডিটোরিয়াম এবং দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার। এছাড়া এখানে রয়েছে ছোট—বড় প্রায় ২৬টি লেক। যেগুলো বর্তমানে অতিথি পাখির কল কাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। 

সুদীর্ঘ ৫৩ বছরের পথপরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণাসহ অন্যান্য শিক্ষা কর্মকাণ্ডে গৌরব রচনা করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে দেশের একমাত্র আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরিতে অবদান রাখছে আপন মহিমায়। 

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ম্যাগাজিন শিক্ষা ও গবেষণার উপর ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং ২০২৪’—এর তালিকায় স্থান পেয়েছে দেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। তার মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

এ বিষয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং ২০২৪’—এ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১০০০ এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আমরা এই র‌্যাঙ্কিংয়ে আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //