বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জাবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক অনন্য বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) গৌরব ও অগ্রযাত্রার ৫৩ বছর পূর্ণ করলো স্বায়ত্তশাসিত ও দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি।

মুঘল আমলের বাংলার রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ রাখা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনা, অনুভূতি ও প্রত্যাশার কথা এক করে লিখেছেন এস এম তাওহীদ। 

শিক্ষা ও গবেষণায় আরও উদ্যোগী হবে
প্রতিষ্ঠার পর ৫৪ বছরে পদার্পণ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে গবেষণা। অথচ এই গবেষণাখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেকসময় আমাদের ভালো গবেষণা আইডিয়া থাকলেও অর্থ সংকুলান করতে না পারায় গবেষণা করতে পারছি না। পড়াশোনার মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি এবং তাদেরকে বৃত্তি প্রদান করে পড়াশোনার সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকা, আবাসন সমস্যা এসব কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও আগ্রহী হচ্ছে না। পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা বা ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করা এখন সময়ের দাবি। গবেষণাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রজেক্টে ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, এসব উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ভর্তি তথ্য ওয়েবসাইটসহ অন্য মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করা যেতে পারে। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রতিটি বিভাগে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই জিনিসগুলো বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। 

তারেক মাহমুদ
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ 

বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ আরও সমুন্নত হবে
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আজ ম্রিয়মাণ হয়ে আছে। সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে বর্তমান শিক্ষার্থীদের। আমরা করোনা পূর্ববর্তী সময়ে দেখেছি টিএসসির প্রতিটি সংগঠন তাদের দৈনন্দিন চর্চায় মুখরিত থাকতো। অথচ করোনার পর কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে সব। শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি চর্চাতে মনোযোগ কমেছে। পাশাপাশি বিদেশি সংস্কৃতি চর্চার আগ্রাসন আমাদের নিজস্বতার উপর প্রভাব তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো আগ্রহ নেই যথাযথ সংস্কৃতি চর্চা এমনকি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উন্নতি সাধনে। সংস্কৃতি চর্চার সাথে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছি। পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের নিবন্ধিত সংগঠনগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বার্ষিক বাজেট এত কম যা সংগঠনগুলোর জন্য অপর্যাপ্ত।  

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রশাসনের প্রতি প্রত্যাশা রইলো, তারা যেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উন্নতি সাধনে কাজ করেন এবং সংগঠনগুলোকে আরও প্রাণবন্ত করতে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করেন। সংস্কৃতির অপব্যবহার রোধ করে সাংস্কৃতিক রাজধানীর খ্যাতিটা যথাযথ হোক এই আশাই করছি এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে। 

মনিরুল ইসলাম
লোকপ্রশাসন বিভাগ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক
৫৩ বছরে পদার্পণ করল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক ঐতিহ্যের এবং লড়াই সংগ্রামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষায়- গবেষণায়, রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে কতটুকু গুণগত মান তৈরি করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে হলগুলোতে গণরুম। যেখানে কিনা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পুরোপুরিভাবে অস্বাস্থ্যকর এবং পড়াশোনার অনুপযোগী পরিবেশে একটা বড় সময় জুড়ে অবস্থান করে। প্রত্যেক হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর যে সন্ত্রাসী মূলক রাজনৈতিক চর্চা সেই চর্চা এই ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর র‍্যাগিং নামক  হাতিয়ার সর্বদা তাক করে রয়েছে। ভীরু, মেরুদণ্ডহীন, প্রশ্নহীন, লড়াই সংগ্রাম বিমুখ প্রজন্ম তৈরি করতেই ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি র‍্যাগিং টিকে রেখেছে।

যার ফলে দিনের পর দিন এই ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। 

জাকসু নির্বাচন, যা কিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যেকোনো প্রয়োজনে কথা বলার আতুর ঘর ছিল কিংবা হতে পারতো, সেই জাকুস নির্বাচন আজ ৩২ বছর যাবৎ ধরে বন্ধ। ছাত্ররাজনীতির আদর্শিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই জরুরি। নির্বাচন না দেওয়ার মধ্যে দিয়ে যেমন একদিকে নষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবেশ তার পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন খাতে সংকুচিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অধিকার। তবে আজকের এই দিনে প্রত্যাশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসবে। 

সোহাগী সামিয়া
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ

উন্নয় করতে হবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়। জীববৈচিত্র্য এখানে সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। তবে উন্নয়নের মহাযজ্ঞে জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া যত্রতত্র ভবন নির্মান করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণের জন্য কোনো ধরনে বিচার বিবেচনা ছাড়াই গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। পশু পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের খাদ্য ও আবাসস্থল এই গাছপালা ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পশু, পাখি ও কীটপতঙ্গ। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। শীতে পরিযায়ী পাখির অভয়ারণয় ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুই বছর যাবৎ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমার প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেটুকু জীববৈচিত্র্য এখনো টিকে আছে তা সংরক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

মহাপরিকল্পনা করে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে যাতে জীববৈচিত্র্যের আর ক্ষতি না হয়। 

আল মামুন
বাংলা বিভাগ 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //