জবিতে ক্যাম্পাসের পাম্প প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসে খেলার মাঠে পানির পাম্প বসানোর টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই কর্মকর্তার নাম মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে খেলার মাঠে পানির চাহিদা মেটাতে প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয় গত বছর। এই প্রকল্পের কাজ পান অমিত কুমার নামে এক ঠিকাদার। সেই কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক অর্ডার) দেরিতে পাওয়ায় দ্রুত কাজ শুরু করতে পারেননি তিনি। তবে তার অগোচরেই নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে টেন্ডার ছাড়াই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানির পাম্প বসান কাজী মনির। প্রায় ছয় লাখ টাকার এই প্রকল্পে রাতারাতি অল্প গভীরতায় পানির পাম্প বসিয়ে তিনি তুলে নেন প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।

এদিকে টেন্ডার পেলেও নিজে পাম্প বসানোর কাজ করতে পারেননি অমিত কুমার নামের ওই ঠিকাদার। তাকে জোর জবরদস্তি করে অর্থ আত্মসাৎ করতেই কাজী মনির ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাম্প বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অমত কুমার নামের ওই ঠিকাদারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রকল্পের টাকাও তার একাউন্টের মাধ্যমেই তুলা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে এমন কাজ করাই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়েই তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং প্রয়োজনীয় গভীরতায় পাম্প স্থাপন না করায় আবারও পাম্প তুলে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাম্প আমরা একসাথে বসাতে চেয়েছিলাম যেন আর তোলা না লাগে। সেজন্য আমরা টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। কাজের অনুমতির পর আমাদের উপযুক্ত জায়গায় পাম্প বসানোর পরিকল্পনা ছিল যাতে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শেষে সেটি তুলে ফেলতে না হয়। অথচ কাজী মনির নিজের প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি পাম্প বসিয়ে ফেলেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রকল্প চলাকালীন সময়ে নতুন করে পাম্প বসাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক লক্ষ টাকা গচ্ছা দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, যে টেন্ডার পেয়েছে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাতারাতি কাজটি করা হয়েছিল বলে শুনেছি। এ বিষয়ে ঠিকাদার কিছু জানতো না বলেও ঠিকাদার নিজেই আমাকে জানিয়েছিলেন। আর অল্প গভীরতায় মানহীন একটি পাম্প বসিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। যে কাজ করা হয়েছিল সেই অনুযায়ী অনেক বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি নিয়মবহির্ভূত।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাম্প বসানোর কাজ পাওয়া ঠিকাদার অমিত কুমার বলেন, টেন্ডারটি আমি পেয়েছিলাম। আমি ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও পাম্প বসানোর কাজটি করতে পারিনি। শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্রের সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের (কাজী মনির) ইমার্জেন্সি পাম্প বসানোর কথা বলে আমাকে ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে নিজেই পাম্পটি বসান। আমার একাউন্ট ব্যবহার করেই তিনি টাকা উত্তোলন করেন। ইঞ্জিনিয়ার দপ্তর থেকে হিসাব করে দেড় লাখ টাকার মতো ফেরতের কথা বলা হয়েছিল। আমি সেটা ফেরত দিয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি কোম্পানিকে। কোম্পানি যদি নিজে না করিয়ে অন্য কাওকে দিয়ে করায় সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা আইনগতভাবে লোক পাঠিয়েছি এবং যেটুকু কাজ হয়েছে সেটারই বিল দিয়েছি। কাজ যেহেতু কম হয়েছে তার বিল কর্তন করা হয়েছে। 

টেন্ডার অনুযায়ী কাজ বুঝে না পাওয়ার পরেও কেন বিল পরিশোধ করা হলো এ প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কাজী মনির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এটার বিষয়ে কিছুই জানি না৷ পাম্প বসানোর কাজটি টেন্ডারের কোনো কাজ ছিল না। সেই সময়ে ভিসি দপ্তর থেকে কাজটি করিয়েছে, আমরা আমাদের দপ্তর থেকে করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হয়ে টেন্ডার পাওয়ায় ঠিকাদারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এমন কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //