নিয়োগ নিয়ে উত্তাল ইবি: উপাচার্যের পক্ষে ছাত্রলীগ

সম্প্রতি নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের অডিও ভাইরালসহ নানা দুর্নীতির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সকল নানা অভিযোগে নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে শিক্ষকদের একাংশ ও কর্মকর্তারা। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ ও শাখা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের জন্য  নিয়োগ বোর্ড ছিল। এর আগে ১২টি দাবিতে সকাল ৯টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করে কর্মকর্তারা। পরে কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে তাদের ১২টি দাবি তুলে ধরেন। একই সাথে তারা নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানান।

এরই মাঝে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, অধ্যাপক ড মাহবুবুর রহমান এবং অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ স্থগিত রাখতে উপাচার্যের কাছে দাবি জানান। এসময় উপাচার্য ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গেলে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। সেখানে তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ‘দালাল, দুর্নীতিবাজসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়াও এময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিয়োগ বোর্ড চলমান রেখে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি জানান।

উপাচার্য নিজে শিক্ষকদের হেনস্তা করার জন্য  ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কার্যালয়ে ডেকে এনেছিল বলে অভিযোগ করেন অবস্থানরত শিক্ষকরা। তবে উপাচার্য এটি অস্বীকার করে বলেন, আমি এর সাথে কোন ভাবেই জড়িত ছিলাম না। শিক্ষকদের সাথে আলোচনা চলাকালীন ছাত্রলীগের প্রবেশ অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের এভাবে প্রবেশ করা উচিত হয়নি।

এর আগে, গতকাল ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে নিয়োগ বোর্ডের একদিন আগে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। এর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, নিয়োগ বোর্ড নিয়ে কর্তৃপক্ষ যাদের যোগ্য মনে করবে তাদের নিয়োগ দিবে। এখানে ছাত্রলীগের কোন বিষয় নেই। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক থাকুক।

এসময় উপাচার্যের কার্যালয়ের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে যারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তারা ছাত্রলীগের সাবেক বিভিন্ন পদের নেতাকর্মী। তারা দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে দিন মজুর হিসেবে কাজ করছে। এখন তারা যদি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আন্দোলন করে তাহলে এখানে ছাত্রলীগের কিছু করার নেই। 

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ এখনো সুরাহা হয়নি। এরইমাঝে তিনি নিয়োগ বোর্ড চালু করছেন। আমরা কোন ভাবেই এই নিয়োগ বোর্ড হতে দেব না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এজন্য আমরা চায় ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল নিয়োগ বন্ধ থাকুক।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমি বিষয়টি তে মর্মাহত। আমি মনে করি যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের যে মান মর্যাদা সেটি নষ্ট করেছে। আমি এই বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ আশা করছি। 

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাথেও আমার কোন যোগসূত্র নেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //