ইবির গণরুমে এবার ছাত্রকে নগ্ন করে রাতভর নির্যাতন

বছর না ঘুরতেই এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন এক ছাত্রকে নগ্ন করে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গণরুমে গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার উপর নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকৃহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

অভিযুক্তরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ সাগর। তারা উভয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গণরুমে (কক্ষ নম্বর ১৩৬) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পরিচয় হওয়ার কথা বলে ডাকে অভিযুক্তরা। কক্ষে প্রবেশের পর অভিযুক্তরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নানা কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এতে ওই শিক্ষার্থীর ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে অভিযুক্তরাসহ কয়েকজন সিনিয়র তাকে বিবস্ত্র করে রড দিয়ে মারধর করেন। তারপর বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে জোরপূর্বক টেবিলের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও তাকে নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করে অভিযুক্তরা। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কয়েক দফায় তার উপর নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়াও ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ভয় দেখানো হয়। তার কক্ষের বিছানাপত্র বাহিরে ফেলে দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাও লালন শাহ হলের ১৩৬ নং কক্ষে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, ঘটনার পরের দিন (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জিয়া মোড়ে শাখা ছাত্রলীগ কর্মী হাফিজ এবং নাসিম আহমেদ মাসুমসহ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযুক্তদের ডেকে ভুক্তভোগীর সঙ্গে মীমাংসা করে দেন। এসময় তারা অভিযুক্তদের চড়-থাপ্পড়ও মারেন।

এ ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী ছাত্রলীগ কর্মী নাসিম আহমেদ মাসুম বলেন, ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে। আমি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, গত বুধবার রাতে আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তা নির্মম। ঘটনার পরে হলের বড় ভাইয়েরা বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর বলেন, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাছাড়া আমি ওইদিন হলের বাইরে ছিলাম। 

অভিযুক্ত মুদাচ্ছির খান কাফির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী এ বিষয়ে অভিযোগ দেয় এবং অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ কর্মী হয়ে থাকে তবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, আমি আন অফিসিয়ালি বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তবে ভুক্তভোগী এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। যদি অভিযোগ দেয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী নামের এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এছাড়াও বিষয়টি গড়ায় আাদালত পর্যন্ত। গত ২১শে আগস্ট ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ছাত্রলীগ নেত্রীসহ অভিযুক্ত পাঁচজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়। সে ঘটনার এক বছরের মাথায় এবার এক ছাত্রকে নগ্ন করে নির্যাতন করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //