বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ বিভাগে নেই অধ্যাপক

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র একজন। প্রতিষ্ঠার তেরো বছরেও ২৪ বিভাগে নেই কোনো অধ্যাপক। প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থীদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ২১০ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতাও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তবে সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকসংকট অনেকটাই দূর হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র দুইজন অধ্যাপকের খালি পদে নিয়োগের উল্লেখ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ ইউজিসি থেকে ছাড়কৃত অর্গানোগ্রামভুক্ত অধ্যাপকের পদের সংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়,পদ খালি থাকার সাপেক্ষে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ২১০ জন। এর মধ্যে ৪৫ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকায় ১৬৫ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে ২৫ বিভাগের পাঠদান। তাছাড়া ছয়জন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে গিয়ে আর ফেরত আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্গানোগ্রামভুক্ত শিক্ষকদের পদের সংখ্যা ৪৫৩টি। এরমধ্যে ইউজিসি কর্তৃক ছাড়কৃত পদের সংখ্যা ২২৯টি।

তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, অর্গানোগ্রামভুক্ত অধ্যাপকের পদের সংখ্যা ৪৮টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র একজন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য নিজেও একজন অধ্যাপক তবে সেটি অস্থায়ী পদ। একমাত্র স্থায়ী অধ্যাপক হলেন  ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন। এর আগে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাসিনুর রহমান অধ্যাপক হিসেবে থাকলেও দীর্ঘদিন অনুমতিবিহীন ছুটিতে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। সে হিসেবে এখন কেবলমাত্র একজন অধ্যাপক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই নতুন নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে, আসন সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও, পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে নানামুখী চাহিদা। কিন্তু সেসব চাহিদা পূরণে অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নানা সংকটের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে অধ্যাপক না থাকায় শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, অধ্যাপকরা সাধারণত অভিজ্ঞ হন। তাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৪টি বিভাগে অধ্যাপক না থাকায় ঐসব শিক্ষার্থীরা অধ্যাপকের মতো অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপকের সান্নিধ্যে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বিষয়টি আজীবন আমাদের জন্য আফসোসের হয়ে থাকবে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংকট তো অনেক। এরমধ্যে থেকেও শিক্ষার মান যাতে নিশ্চিত করা যায় সে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক একটি সিনিয়র পদ। আমরা কয়েকবার অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ আসতেই চায় না। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আমরা তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক না থাকা একটি সমস্যা। নিয়োগ দিয়েও অধ্যাপক পাওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ দিয়েও কেন অধ্যাপক পাচ্ছে না সে বিষয়গুলো আমাদের জানালে আমরা দেখবো অধ্যাপকরা কেন যেতে চাচ্ছে না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের এ বিষয়ে জানানো হয় তাহলে বিষয়টি আমরা দেখবো।প্রয়োজনে আমরা নিয়মানুযায়ী ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ধাপে ধাপে আমরা আরো নিয়োগ দেব৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো কমপক্ষে ৫০ জন অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //