ছাত্রলীগ নেতার মোটরসাইকেল চুরি, অভিযুক্ত আরেক নেতা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে মোটরসাইকেল ‘চুরির’ অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির মালিকানা দাবি করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা দুষছেন আরেক ছাত্রলীগ নেতাকে। করেছেন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগও।

তবে মোটরসাইকেলের মালিকানা দাবি করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নূর উদ্দীন হোসাইন মোটরসাইকেলটির মালিকানার স্বপক্ষে কোনো দাপ্তরিক প্রমাণ প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি। জানাতে পারেননি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও।

পালসার মডেলের ১৫০ সিসির কালো রঙের মোটরসাইকেলটি খোয়া যাওয়ার পেছনে তার অভিযোগের তীর কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোস্তফা রিয়াদের দিকে।

মোটরসাইকেলের মালিকানা দাবি করা নূর উদ্দীন হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমি হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সর্বশেষ ২৩ মার্চ রেজাউল মোস্তফা রিয়াদ আমার মোটরসাইকেল নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছে। তার আগে সেখান থেকে বেরিয়েছে জিলান আল সাদ এহসান।

তিনি বলেন, গত ২০ তারিখ আমি আমার মোটরসাইকেল কাজী নজরুল ইসলাম হলে রেখে ঢাকা গিয়েছিলাম। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ২১ মার্চ রাত ১০টা ৩ মিনিটে বাইক রাখার জায়গার দিকে তাক করা সিসিটিভি ক্যামেরাটি অন্যদিকে ঘুরানো হয়। এসময় আরমান সিদ্দিকীকে বারবার প্রভোস্ট কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজের মনিটরের দিকে তাকাতে দেখা যায়। এরপর ২২ মার্চ বিকেল ৫ টার দিকে কয়েকজনকে বারবার আমার গাড়ির দিকে আসা যাওয়া করতে দেখা যায়। ২৩ মার্চ দুপুর একটা দুই মিনিটে করিডোরের সিসিটিভি ক্যামেরায় স্কচটেপ মেরে দেওয়া হয়। সর্বশেষ একই দিন দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে রিয়াদকে হলের গেইট দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হতে দেখা যায়। আমি ক্যাম্পাসে ফিরি ২৫ মার্চ রাতে এরপর ২৬ মার্চ নজরুল হলে বাইক নিয়ে গিয়ে দেখি আমার বাইক নেই।

বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা হয়েও নজরুল হলে মোটরসাইকেল রেখে ঢাকা যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নূর উদ্দিন বলেন, আমার বাইকটি দিয়ে আমার হলের প্রায় সবাই সুবিধা ভোগ করে থাকেন। যেহেতু বেশ কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় গমন করা উদ্দেশ্য ছিল তাই বাইকটির অযত্ন এবং ক্যাম্পাস বন্ধের কারণে হলের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হলের একাধিক গেইট থাকায় নিরাপত্তাশঙ্কায় নজরুল হলে রাখা উপযুক্ত মনে করেছিলাম।

যে সিসিটিভি ফুটেজের কথা নুর উদ্দিন বলছেন তা এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ যখন হলের গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন রিয়াদের আগে ও পরে আরো দুইজন শিক্ষার্থী কাজী নজরুল ইসলাম হলের গেটে দিয়ে বের হচ্ছেন। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জিলান আল সাদ এহসান ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরমান সিদ্দিকী। এদের মধ্যে আরমান সিদ্দিকী নজরুল হলে থাকলেও জিলান থাকেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে জিলান আল সাদ এহসান বলেন, রিয়াদ তার (নূর উদ্দিন) থেকে চাবি নিয়ে নজরুল হল থেকে বাইক নিয়ে বের হয়েছে। আমি তার সাথেই ছিলাম। পরবর্তীতে আমি আমার কাজ করতে যাই, রিয়াদ বাইক নিয়ে কোটবাড়ি বাজারে যায়। এরপর রিয়াদ ফোন দিয়ে বলে বাইকটি ওখান (কোটবাড়ি বাজার) থেকে হারিয়ে গেছে। এখন যে অভিযোগটি (মোটরসাইকেল চুরির) করা হচ্ছে তা আসলে মিথ্যা।

বিয়াদ হল থেকে বাইক নিয়ে বের হওয়ার পরপর কাজী নজরুল ইসলাম হলের গেট দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থী আরমান সিদ্দিকী বলেন, আমি বের হওয়ার সময় রিয়াদ ভাইকে দেখেছিলাম চাবি দিয়ে বাইক স্টার্ট দিতে। এরপর আমি কিছুই জানি না।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাইক নিয়ে বের হওয়া কাজী নজরুল ইসলাম হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোস্তফা রিয়াদ বলেন, আমি নূর উদ্দিনের থেকে চাবি নিয়ে তার বাইক নিয়ে কোটবাড়ি বাজারে গিয়েছিলাম। বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময় তিনি গেইটের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে কোটবাড়ি বাজারের এক পাশে বাইক রেখে আমি ফল কিনতে যাই৷ ফল কিনে এসে দেখি বাইকটা নেই। এরপর আমি সাথে সাথেই নূর উদ্দিনকে জানাই। কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতেও আমি গিয়েছি। কিন্তু নূর উদ্দিনের বাইকের কাগজপত্র না থাকায় পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারি নাই। এখন যে অভিযোগটি করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাকে হেয় করার জন্য এমনটা করছে।

নূর উদ্দিনের কাছ থেকে চাবি নেওয়া ও বাইকের কাগজ না থাকা নিয়ে রিয়াদ যে দাবি করছেন তা প্রসঙ্গে নূর উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসম্ভব, আমি ২০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ঢাকায় ছিলাম এবং সেই সময় বাইকের চাবি আমার সাথেই ছিল। আমি তাকে বাইকের চাবি দিব কিভাবে? বাইকের চাবি তো এখনো আমার কাছে আছে। এই বলে নূর উদ্দিন তার কাছে থাকা একটি চাবির গুচ্ছ প্রতিবেদককে দেখান।

তিনি বলেন, আমার বাইক আমি সেকেন্ড-হ্যান্ড কিনেছি। তাই কাগজ নেই। কাগজ করতে দিয়েছি। সিসিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে রিয়াদ আমার বাইক গেইট দিয়ে বের করেছে। এই গাড়ির মধ্যে এক ফোটা তেলও ছিল না যে চালিয়ে নিয়ে যাবে।

অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, একটা অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু হলের বিষয় সেহেতু হল প্রশাসন দেখবে। হল প্রশাসন যদি আমাদের সাহায্য চায় সেক্ষেত্রে আমরা সাহায্য করবো।

এ ব্যাপারে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //