ক্যালিগ্রাফিতে স্বপ্ন বুনছেন নিথি

মিষ্টি হাসির মেয়ে নওরীন নিথি। গল্প-আড্ডায় বন্ধুমহল মাতিয়ে রাখার অসাধারণ এক গুণ রয়েছে তার। বাংলা অথবা ইংরেজি সাহিত্যে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমানে পড়ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তার আঁকাআঁকিতে বেশ ঝোঁক। আজও ছাড়তে পারেননি সেই নেশা। বেশিরভাগ সময়ই আঁকেন এ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফি। লেখাপড়া ও আঁকাআঁকিকে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিথি। প্রশংসা কুড়চ্ছেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক ও বন্ধুমহলে। স্বপ্ন দেখেন দেশের একজন বড় ক্যালিগ্রাফার হওয়ার। নিথির আঁকিবুঁকির দুনিয়ায় গল্প জানাচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবির হোসেন।

নিথির জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিনাজপুর সদরে। ছবি আঁকা, গান শেখা, গাছ লাগানো ও বিভিন্ন রকম ক্রাফটিং করে নিজ বাড়িতেই কেটেছে ছেলেবেলা। নিজ শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার হাতেখড়ি। পরে দিনাজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও দিনাজপুর সরকারী মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন আঁকাআঁকির প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। তখনই তিনি বুঝেছিলেন ছবি আঁকার এক আলাদা প্রতিভা রয়েছে তার মধ্যে। তখন থেকেই শখের বসে আঁকতে বসতেন বারবার। চেষ্টা করতেন যেকোনো কিছু দেখে তার মতো করে একই জিনিস আঁকার। সময়ের পরিক্রমায় রং তুলির সাথে গাঢ় হয় সম্পর্ক, বাড়ে সখ্যতা। পরবর্তীতে আর ছাড়তে পারেননি রঙের দুনিয়া। শখ থেকেই এখন হয়ে উঠছেন পুরোদস্তর ক্যালিগ্রাফার। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফিতেই বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি।


নিথি কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারো কাছে ক্যালিগ্রাফি শেখেননি। এ বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও অবলীলায় এঁকে যাচ্ছেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় লেখাপড়ার চাপে আঁকাআঁকিতে কিছুটা ছেদ পড়ে। তবে করোনাকালে যখন সবাই ঘরবন্দি তখন নিজেকে শানিয়ে নেওয়ার বড় সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সময় কাটানোর জন্য আবারো আঁকাআঁকিতে ডুব দেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

নিথি বলেন, ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব ও গুগল থেকে এ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন ছবি দেখে সেগুলো আঁকানোর চেষ্টা করতাম। প্রথমে খুব কঠিন লাগতো। কোথা থেকে প্যাঁচ শুরু আর কোথায় শেষ সেটা বুঝতেই পারতাম না। তবে বারবার চর্চা করায় এখন আর খুব একটা কঠিন মনে হয় না। এভাবে নিজে থেকেই ক্যালিগ্রাফি শেখা। আজ অব্ধি কোনো কোর্সও করা হয়নি।


মূলত শখের বসে আঁকা শুরু করেছিলাম। তবে শখকে এখন ব্যবসায়িক দিকেও নিয়ে এসেছি। প্রথমে আমার আঁকা বেশ কিছু ক্যালিগ্রাফির ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করি। সেখানে শুভাকাঙ্ক্ষিদের প্রশংসা ও প্রচুর উৎসাহ পাই। এভাবে নিয়মিত আমার আঁকা ক্যালিগ্রাফির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকি। এরই মধ্যে দুই/একটি করে বিক্রি শুরু হয়। পরে অনলাইনে নিয়মিত প্রচারণা চালাই। এভাবে ক্যালিগ্রাফির অর্ডার নিতে ‘নিথি’স ক্যালিগ্রাফি’ নামের একটি পেজ খুলি। চালু হয় ব্যবসায়িকভাবে। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সাড়া পাচ্ছি। এখন পড়াশোনার পাশাপাশি বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয় ক্যালিগ্রাফিতে।


তিনি বলেন, আমার কাজে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করে আমার বাবা-মা। এছাড়াও বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, বিভাগের শিক্ষক সবারই সাপোর্ট পেয়েছি। আমার কাজকে কেউ অপছন্দ করলে আমি আরো ভালোভাবে কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। এটি কখনো আমার জন্য খারাপ কোন প্রভাব ফেলেনি। ক্যালিগ্রাফি নিয়েই আমার কাজ করার ইচ্ছা। আরো অনেক বেশি শিখতে চাই। ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন কোর্সগুলো করার ইচ্ছা আছে। ক্যালিগ্রাফি নিয়েই আমি নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই। আমি চাই, আমার দেশ থেকে অনেকেই এ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফি শিখে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক এবং এর মাধ্যমে আয় করে তারা তাদের বেকারত্ব কাটিয়ে তুলুক।

নিথীর শিক্ষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বলেন, নিথী তার কাজের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী। ক্যালিগ্রাফির প্রতি রয়েছে তার আলাদা রকমের ভালোবাসা। সে কোনো কাজ শুরু করলে তা খুবই একাগ্রতার সাথেই শেষ করে। আমার বিশ্বাস নিথী একদিন দেশের খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি পাবে। বাংলাদেশের সকল শুদ্ধ ধারার সকল ক্যালিগ্রাফার ও নিথির প্রতি সবুজাভ শুভেচ্ছা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //