জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে ছাত্রলীগের জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন চেক করার ঘটনায় মধ্যরাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। হামলায় চার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আহত এক নারী শিক্ষার্থীকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকি একজন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আজ সোমবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।
জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে 'তুমি কে আমি কে? রাজাকার' স্লোগানের জেরে দুই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন চেক করার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনা জানাজানি হলে গভীর রাতে মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা৷ এক পর্যায়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী প্রাচুর্য চৌধুরীর নেতৃত্ব আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
হামলার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ৪৬ ব্যাচের ছাত্র প্রাচুর্যসহ বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ নেন। এছাড়া এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আর রাফি চৌধুরী ও মো. সাইফুল্লাহর সম্পৃক্ততাও গেছে। হামলার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে আহসান লাবিব, সোহাগী সামিয়া, তৌহিদ সিয়াম ও মেহরাব সিফাতসহ একজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে আহসান লাবিবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এবং সোহাগি সামিয়াকে এনাম মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য আন্দোলনকারীদের জন্য অবমাননাকর এমন অভিযোগ তুলে রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার', 'চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার' প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থীরাও স্লোগান দিয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে ৪৮ ব্যাচের সিনিয়ররা এসে তাদের সবাইকে ডেকে ডাইনিংয়ে আসতে বলে। ১২৪ নং কক্ষ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের কাউসার আলম আরমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আশিক ও ইংরেজি বিভাগের জাহিদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ডাইনিংয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের 'রাজাকার' স্লোগান দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে ম্যাসেঞ্জারের ম্যাসেজ চেক করা হয়৷ দীর্ঘসময় পর্যন্ত ডাইনিং হল থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পান হলের শিক্ষার্থীরা৷ পরে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে তাদের স্লোগানের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়৷ ছাত্রলীগের নেতারা এসময় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে সেখানে নিয়ে আসেন৷ হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে ক্ষমা চান। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের কোন প্রকার মারধর করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তারা৷
এসব ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মোবাইল চেক ও জিজ্ঞাসাবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অস্বীকার করেন এবং টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা বলেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পড়ে তিনি তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের মৌখিক ঘোষণা দেন।
প্রভোস্টের মৌখিক পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার হলের নানাধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়েই আমি অনেকদিন যাবত হল চালিয়ে আসছিলাম। একটা হলের সমস্যা একদিনে ঠিক করা সম্ভব না। তাই আমি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh