অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একটি মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরিত্র হননের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঢাবিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি।
আজ মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষক সমিতিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ল ড. ইউনুসের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সাথে সাথে একটি মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরিত্র হননের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি মানববন্ধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছবির মাধ্যমে শিক্ষক সমিতিকে ড. ইউনুসের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনটি ছিল বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উপর বিদেশী হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে। ওই মানববন্ধনে একজন শিক্ষক যিনি শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদের সদস্য নন তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরষ্কার স্থগিতের দাবি করেছিলেন। এটি ছিল তার নিজস্ব বক্তব্য যা শিক্ষক সমিতির বক্তব্য নয়। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত আছেন তারা সকলেই জানেন যে, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা, প্রতিবাদ সভা কিংবা মানববন্ধনে দলমত নির্বিশেষে যেকোনো শিক্ষক স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করতে পারেন। শুধুমাত্র কার্যকর পরিষদ ও সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।’
এতে আরো বলা হয়, ‘একটি মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগের পরে বিভিন্ন একাডেমিক পদে কর্তব্যরত বিভাগীয় চেয়ারপার্সনবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ ও শিক্ষকবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সিনেট সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন ও শিক্ষক সমিতির সদস্যবৃন্দকে পদত্যাগের জন্য হুমকি প্রদান করছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ৭৩ এর আইনের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ৭৩) মাধ্যমে। গণপদত্যাগের মাধ্যমে এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির এই অপতৎপরতার ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সজাগ থাকার ও এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শিক্ষক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে বিজ্ঞপ্তিটির শুরুর অংশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন এবং সরকারে ঢাবি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) ও দুইজন শিক্ষার্থী উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী, সমতা ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই সরকারের পাশে থাকবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh