ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর প্রকাশ্যে এলো জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সদ্য প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতিবাদে বিবৃতি দিতে গিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সেক্রেটারি ও প্রচার সম্পাদকের নাম জানা যায়।
গতকাল শুক্রবার (১১ অক্টোর) রাত ৮টার দিকে ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে এক ফেইসবুক পেজে ওই বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে সই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক মো. ইব্রাহীম আলী। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিবৃতিতে সভাপতি হিসেবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইকবাল হোসেন ও সেক্রেটারি হিসেবে ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আসাদুল ইসলামের নাম রয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে এক দশকের বেশি সময় পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির তাদের কমিটি থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে জানান দিল।
এমন আত্মপ্রকাশের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন দাবি করেছেন অনেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম চালু ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেটি জানত।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমাদের কার্যক্রম চলছে অনেক আগে থেকেই, তাই এটাকে আত্মপ্রকাশ বলা যাবে না। প্রতি বছরের শুরুতেই আমাদের কমিটি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের বিষয়ে অবগত ছিল। আমাদের কমিটির বাকিরাও খুব শিগগিরই সামনে আসবে। তাদের পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমিক পরিচয়সহ আমরা প্যাডে প্রকাশ করব।’
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক সংবাদের অনলাইনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: গোপনেই সব দখলে নিতে মরিয়া শিবির’ এই শিরোনামের একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত কয়েকটি সংগঠনের আড়ালে শিবিরের ‘গুপ্ত’ সাংগঠনিক কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, বাঁধন, হিউম্যান রাইটস সোসাইটিসহ কয়েকটি সংগঠন।
এরপরই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির ওই খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিটি প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় শাখা শিবিরকে জড়িয়ে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সাধারণ ছাত্রদের শিবির ট্যাগ দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি একটি চরম মিথ্যাচার। আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রশিবির ছাত্রলীগ কর্তৃক ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে।’
এতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রশিবিরের ভাইদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। মামলা-হামলা দিয়ে শিবিরের জনশক্তিদের হয়রানি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অনেক দায়িত্বশীল ভাইয়ের অবৈধভাবে ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। অনেক ভাই ছাত্রলীগের রোষানলে পড়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। সুতরাং সাধারণ ছাত্রদের শিবিরের কর্মীদের দ্বারা শিবির ট্যাগ দেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং প্রকাশ্য মিথ্যাচার।’
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যারয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের। এমনকি শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্তার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে কাটতে থাকে এই বাধা। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও যে সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, ধীরে ধীরে তা প্রকাশিত হচ্ছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের যে বৈঠক হয় তাতে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পরিচয়ে যোগ দেন সাদিক কায়েম। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। পরদিন প্রকাশ পায় সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের পরিচয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কবি জসীম উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
সভাপতি ও সেক্রেটারির পরিচয় প্রকাশের কিছুদিন পর গত ২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়। এর দশদিনের মাথায় প্রকাশ্যে এলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের তিন নেতার পরিচয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh