‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাস’ নিয়ে জবিতে গণ অনশনের ডাক

দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে গণ অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
 
তারা জানিয়েছেন আগামী রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মপরিকল্পনা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের অনশন চলবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অবশিষ্ট কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যে বৈঠক হয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেটি পার হলেও বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম নজরে আসেনি। তারা বরাবরের মতই বলেছে যে-আমরা কাজ করছি।’

গণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত লিখিতভাবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা না হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে। এতে শিক্ষার্থীদের কিছু হলে দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সভাপতি মাসুদ রানার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে না ‘প্রশাসনের গাফিলতির কারণে’।

তিনি বলেন, ‘অনশনের মাধ্যমে আমরা প্রশাসনকে আবারও দেখাব, জগন্নাথ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি রাজপথেই আদায় করতে জানে।’

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরে যা হয়নি সেই কাজগুলো এখন করতে গেলে খানিকটা সময় লাগবে। দুর্নীতিতে জর্জরিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্পকে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সেনাবাহিনী। কোনো নেতিবাচক প্রকল্প তারা সাধারণত নেয় না। আমরা তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইউজিসি এখন সাত কলেজের কাজে ব্যস্ত, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আমাদের ফাইল রেডি আছে।’

শিক্ষার্থীদের অনশনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট করে কোনো সময় বলতে পারব না। এখানে সব কাজ আমাদের হাতে বিষয়টা এমন না। অনেক কাজ ইউজিসির হাতে, তারা কত সময় নেবে তা আমরা বলতে পারি না। আমরা চেষ্টা করে যেতে পারি। আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও অস্থায়ী আবাসনের আপডেট জানাব এবং শিক্ষার্থীদের বোঝাব। তাদের কাছ থেকে যদি কোনো ভালো ধারণা আসে, তাহলে আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে আগাব।’

সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক কোন বাধা আছে নাকি জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘এরকম কোনো বাধার প্রশ্ন ওঠে না। কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে চাইলে আমরা সেটা হতে দেব না।’

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।

পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা গত ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ‘ঘোরাও করেন’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনশনের ঘোষণা দিলেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh