পুঁজিবাজারের সর্বোচ্চ অবস্থানে ডিএসই সূচক

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি চালুর পর সাড়ে সাত বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে ডিএসইএক্স সূচক। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আবার লেনদেন শুরু হয়। 

শুরুর পর ১৫ পয়েন্ট বেড়ে গেলে পরে সূচক কিছুটা কমে যায়। পরে ৬ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে ওঠে বেলা ১১টায়। তবে ১১টা ৯ মিনিটে কারিগরি জটিলতায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর লেনদেন শুরু হয়।

এরপর সূচক কিছুটা কমে ৬ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে নেমে আসে। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ জানায়, লেনদেন আড়াইটার বদলে চলবে বেলা তিনটা পর্যন্ত।

বেলা ২টা ২৬ মিনিটে সূচক পৌঁছে ৬ হাজার ৩৩৭-এ। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বরের রেকর্ড। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট।

ডিএসইএক্স সূচক চালুর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকের নাম ছিল ডিএসই সূচক। সেই সূচকের সঙ্গে তুলনায় করলেও পুঁজিবাজারের এই অবস্থানকে সাড়ে ১০ বছরের সর্বোচ্চ বলা যায়।

২০১১ সালের ৩ আগস্ট সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৯।

গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের সংকটজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন কমিশন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে। নানা সংস্কার, বাজারে তারল্য বৃদ্ধি, বন্ধ কোম্পানিকে চালু করার উদ্যোগসহ নানা কারণে এই এক বছরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ফিরিয়ে এনেছে।

তবে গত জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ার পর তিন মাস অস্থিরতা তৈরি হয়। আর এপ্রিলে এই আদেশ কার্যকর ২০২২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার পর থেকে লকডাউনের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার।

এই সময়ের মধ্যে প্রথমে বিমা খাতে অবিশ্বাস্য উত্থান, পরে বস্ত্র, প্রকৌশল খাত আর বন্ধ লোকসানি বিভিন্ন কোম্পানির দাম বাড়তে থাকে। সবশেষে এখন শুরু হয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকে এই খাতটিও ছিল ঘুমিয়ে। তবে এবার ৯ মাসে আকর্ষণীয় মুনাফা আর অতালিকাভুক্ত বিভিন্ন ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণার পর পুঁজিবাজারেরগুলোও ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করবে বলে আভাস মিলেছে। এই অবস্থায় এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। আর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দাম।

ফান্ডের যে ইউনিটগুলো অভিহিত মূল্য ১০ টাকার ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি নেমে গিয়েছিল, সেই ফান্ডের অনেকগুলোই এখন অভিহিত মূল্য অতিক্রম করেছে, বেশ কয়েকটি অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি। আর নিচেরগুলোও দ্রুত উঠে আসছে।

তবে এখনও ব্যাংক খাত ঝিমিয়ে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে দাম বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আর এই খাতগুলোও জেগে উঠলে পুঁজিবাজারে নতুন সম্ভাবনার যে কথা বলাবলি হচ্ছিল, সেটি বাস্তবে পরিণত হতেই পারে।

এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে এক দশকের সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড গড়েছে পুঁজিবাজার। বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করা, তাদের আরও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে আইনি নানা পরিবর্তন আর সবশেষে বাজারের স্থিতিশীলতায় অবণ্টিত লভ্যাংশ ব্যবহার করে তহবিল গঠনের উদ্যোগের কারণে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়েছেন বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সূচক যখন চালু হয়েছিল, তখন বাজারের যে অবস্থা ছিল সেখান থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। শেয়ারের দাম বেড়েছে, বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে সূচকের যে উত্থান, তার জন্য রেগুলেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

তিনি মনে করেন, বাজার আরও ভালো হতে পারে। কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সার্বিক পিই রেশিও এখন ১৫ থেকে ১৬। যা আমাদের মতো অর্থনীতির দেশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। লেনদেনও হাজার কোটি টাকা। ফলে এ বাজারে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //