ডিসেম্বরেই নতুন রুপে ঢাকা

রাজধানীর সড়কে সৌন্দর্য বাড়াতে এবং কম খরচে নিরবিচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কমিশনের সাথে পরবর্তীতে এই উদ্যোগ সফল করতে যোগ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এই দুই প্রতিষ্ঠান গত ১২ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছে রাজধানীর জঞ্জাল সরাতে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিটিআরসি ও বিদ্যুৎ বিভাগ। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটরদের (ডিস সংযোগ প্রদানকারী) আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে বার বার। কমিটি গঠন করে মাঝে মাঝে দু’একটি অভিযান চালিয়ে কাটা হয়েছে ঝুঁলন্ত তার। কিন্তু সড়কগুলো আগের রূপ ফিরে পেতে সময় নেয়নি ২-৪ ঘণ্টার বেশি।

সর্বশেষ রাজধানীর ঝুলন্ত ইন্টারনেট ও ডিসের তারসহ সকল তার অপসারণের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সময়ের মধ্যে তার অপসারণ না করলে তার কেটে দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট আইএসপি ও ক্যাবল অপারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সেই সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ কোন উদ্যোগ না নিলেও গত ৫ আগস্ট থেকে মাঠে নামে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কোন আল্টিমেটাম না দিয়ে তার অপসারণে শুরু করে ডিএসসিসি। একের পর এক সড়কে তার কাটতে থাকলে টনক নড়ে আইএসপিএবি ও কোয়াবের। তবে সংগঠন দুটি বিগত দিনের মতো আবারো হুমকি-ধামকির পথ বেছে নেয়। 

গত সোমবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে তার কাটা বন্ধের দাবি জানায়, অন্যথায় ১৮ অক্টোবর থেকে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টেলিভিশন সংযোগ বন্ধের হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার আইএসপিএবি ও কোয়াবের সাথে ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। উভয় মন্ত্রীই সংগঠন দুটিকে ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান এবং গ্রহণযোগ্য সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপরের দিনই গতকাল রবিবার নগর ভবনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

অবশেষে বছরের পর বছর ধরে ঢাকা শহরের সড়কে ঝুলে থাকা ক্যাবল টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের ঝুঁলন্ত তার সড়ছে সড়কের ওপর থেকে। নভেম্বরের মধ্যেই এসব তার যাবে মাটির নিচে। ফলে ডিসেম্বর থেকেই জঞ্জালমুক্ত সড়কের নতুন ঢাকা পাবে নগরবাসী। নভেম্বরের মধ্যে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টেলিভিশনের সকল ঝুলন্ত তার মাটির নিচে প্রতিস্থাপনে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, তারের যে জঞ্জালে ঢাকা শহর সয়লাব, সেই জঞ্জাল থেকে আমরা ঢাকা শহরকে মুক্ত করতে চাই। সেজন্যই আমাদের আজকের এই আলোচনা। আমরা সকলেই একমত হয়েছি, আমাদের প্রাণের এই ঢাকাকে সুন্দর ঢাকা হিসেবে পরিণত করতে চাই। আমরা যৌথভাবে কাজ করলে সেটা সম্ভব, সে ঐকমত্যে আমরা উপনীত হয়েছি।

সোমবার (আজ) থেকে আইএসপিএবি ও কোয়াব তাদের নিজ উদ্যোগে এসব ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যেতে কাজ শুরু করবে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার বলেন, ধানমন্ডি এলাকা হতে এই কার্যক্রম শুরু হবে এবং পুরো দক্ষিণ সিটিতে নভেম্বরের মধ্যে তারা এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদেরকে এই কাজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এ কাজে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, বিনা খরচে তাদের রাস্তা প্রয়োজন হলে রাস্তা, ফুটপাত প্রয়োজন হলে ফুটপাত, নর্দমা প্রয়োজন হলে নর্দমা অর্থাৎ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যেসব অবকাঠামো ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেসব অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে।

এদিকে সিটি করপোরেশন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার অনুমতি দিলেও গাইডলাইন সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে। ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী এনটিটিএন অপারেটর ছাড়া অন্য কেউ কোন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নির্মান, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে না। জানতে চাইলে ফাইবার অ্যাট হোমের গভর্নমেন্ট রিলেশন্স এন্ড রেগুলেটরি বিভাগের প্রধান আব্বাস ফারুক বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোন চিঠি পায়নি। তবে আমরা প্রত্যাশা করি গাইডলাইনে যেটি আছে সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে। তিনি বলেন, যে কোন ধরণের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হলে অবশ্যই এনটিটিএন অপারেটরদের মাধ্যমে করতে হবে। এক্ষেত্রে বিটিআরসিকে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

আব্বাস ফারুক বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পেলে বিটিআরসিকে অনুরোধ জানাবো গাইডলাইন অনুযায়ী যেনো সবকিছু করা হয়। অন্যত্থায় এনটিটিএন অপারেটরদের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নেটওয়ার্ক নির্মাণ কোন কাজে আসবে না।

এনটিটিএন গাইডলাইন অনুযায়ী আইএসপিএবি ও কোয়াব নিজ উদ্যোগে ট্রান্সমিশন ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করতে পারে না, সেক্ষেত্রে বিটিআরসির সাথে কোনো সমন্বয় করা হবে কিনা জানতে চেয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, যেহেতু মন্ত্রী (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন এবং মন্ত্রীর সাথে উনাদের (আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতৃবৃন্দের) কথা হয়েছে এবং আজকে (গতকাল) মন্ত্রীর সাথে আমার দু’দফা কথা হয়েছে, সেজন্য এ বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ডিএসসিসি

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //