এএসপির মৃত্যু

এএসপির মৃত্যু: অনুমোদন ছাড়াই চলছিল মাইন্ড এইড হাসপাতাল

রাজধানীর আদাবরে কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই মাইন্ড এইড হাসপাতালের কার্যক্রম চলছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মইনুল আহসান।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. মইনুল আহসান বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাইন্ড এইড হাসপাতাল চালানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আমরা তখন পরীক্ষা করে দেখেছি হাসপাতালটি চালানোর মতো সুবিধা ও জনবল কিছুই তাদের ছিল না। সেজন্য মার্চ মাসে তাদের আবেদন আমরা পেন্ডিং (স্থগিত) করি।’

তিনি বলেন, ‘স্থগিত আদেশের পর তারা যদি কোনো চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। তারা এটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে চালাচ্ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে কিছু ক্লিনিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ও হাসপাতালে ব্যবস্থা রাখতে হয়। যেন জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসা দেয়া যায়। কিন্তু তাদের সে ব্যবস্থা ছিল না।’

সিভিল সার্জন বলেন, ‘মাইন্ড এইড হাসপাতাল আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি, এ কারণেই এটা বন্ধ করার মতো অবস্থায় নেই। এই ঘটনার শুরু থেকে তদন্ত করে হাসপাতালের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ যে ব্যবস্থা নেয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে সেটা আমরা করব। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের হাসপাতালে কোনো অনুমতি ছিল না। হাসপাতালে অনুমতি দেওয়ার পরে যদি কেউ কোনো ব্যত্যয় ঘটিয়া থাকে, তখন সেই বিষয়গুলো আমরা দেখে থাকি। ঢাকা একটি জনবহুল শহর, এখানে প্রায় কয়েক হাজারের মতো চিকিৎসা স্থাপনা আছে। এই হাসপাতালগুলোর আমরা দেখভাল করছি এগুলো আমাদের চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। হাসপাতালে ভেতরের সব খবর আমরা পাই না। যখনই জানতে পারি, সে অনুযায়ী আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, ‘তাদের কোনো অনুমতি না থাকার কারণে হাসপাতালটি আমরা সিলগালা করছি না। তারা আমাদের কাছে যে অনুমতি চেয়েছিল সেটা আমরা বাতিল করে দেবো। এই হাসপাতালটি যেন পরবর্তীতে চালানোর জন্য, তারা কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এর আগে  গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এসপি আনিসুল করিম শিপনকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আজ সকালে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

পুলিশ জানায়, ভর্তি করানোর কয়েক মিনিট পরই তাকে অচেতন অবস্থায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখান থেকে তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) গ্রেফতার ১০ জনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামিরা হলেন- হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম ও শেফ মো. মাসুদ।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, মৃত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক।

হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার উদ্ধার করা ফুটেজে দেখা গেছে, আনিসুলকে সাতজন ধরে টেনে-হেচড়ে একটি কক্ষে ঢুকাচ্ছে। এরপর তাকে ফেলে তিনজন তার পিঠের উপরে, দুইজন পায়ের ওপরে ও দুইজন হাত ধরে বেঁধে ফেলে। দুইজন কুনুই দিয়ে তার পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত করছে। মারধরের কয়েক সেকেন্ড পর অচেতন হয়ে পড়ে আনিসুল। তারপর তার মুখে পানি ছেটানো হয়, এই সময় মেঝেতে পানি দিয়ে কিছু একটা মুছতেও দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর অ্যাপ্রন পরা দুই নারীকে তার বুকে পাঞ্চ করতে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //