ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চান রেজাউল

মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে নগরীর বহদ্দারহাটে নিজের বাড়ির আঙিনায় সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

নির্বাচনে কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা ছাড়া ভোট ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে’ হয়েছে দাবি করে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী তাকে মেয়র নির্বাচিত করায় নগরবাসীকে ‘শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’ জানান।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তা বিবেচনায় নিয়ে জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ বিজয় আমার নয়, এ বিজয় চট্টগ্রামবাসীর। এ বিজয় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকার।

নগরীর সমস্যা সবার সাথে পরামর্শ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে রেজাউল বলেন, নগরবাসীকে কথা দিতে পারি, প্রতিশ্রুতি পূরণের কঠোর পরিশ্রম করব। স্পষ্ট বলতে চাই, অন্যায় অনৈতিক কাজে কখনো ক্ষমতাকে ব্যবহার করব না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। কোনো লোভ অনৈতিকতা আমাকে এক ইঞ্চি বিচ্যুতি ঘটাতে পারবে না। কখনো লোভ-লালসা ছিল না, এখনো নেই। কখনো নীতি বিসর্জন দিইনি। স্বকীয়তা নিয়ে কাজ করে যাব।

ভোটের হার মাত্র সাড়ে ২২ শতাংশ, এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল বলেন, কাল কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশ বজায় ছিল। কর্মজীবী মানুষ ভোটের চেয়ে কাজকে প্রাধান্য দেয়। সরকারি ছুটি না থাকায় সেটাও কিছু সমস্যা হয়েছে। এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ১০০ বা ৯০ শতাংশ ভোট পড়ে। গণতন্ত্রে যারাই ভোটে অংশ নেয়, তাদের মধ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি বিজয়ী হবেন।

তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স, জলাবদ্ধতা, গ্যাস-পানি সংকটসহ আঞ্চলিক দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন আমি আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। চাক্তাই খাল সংগ্রাম কমিটির আমি চেয়ারম্যান ছিলাম। এর মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। করোনার সময়ে পাড়ায় পাড়ায়, বস্তিতে যতটুকু সামর্থ্য আমার তা নিয়ে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। আইসোলেশন সেন্টার করেছি। মানুষ মনে করেছে- আমি তাদের বিপদের বন্ধু। আমি প্রচার বিমুখ, কিন্তু মানুষ আমাকে মনে রেখেছে।

নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষ আমাকে এত পছন্দ করেছে, আমি অভিভূত। মানুষ ভালোবেসেছে, মর্যাদা সম্মান দিয়েছে। কথা দিতে পারি, সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নগরীতে জলাবদ্ধতা ও চিকিৎসা সেবার সংকট আছে। ছয় হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমবে। খালগুলো দখল হয়ে গেছে, উদ্ধার করতে হবে। আমি নিজেও জলাবদ্ধতার শিকার। করোনার সময়ে অনেক প্রিয়জনকে আমরা হারিয়েছি, যাদের করোনা হয়নি, তারাও সেবা পায়নি। শুরুতে এমন পরিস্থিতি ছিল। ৪১টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করতে চাই।

সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে জোর দিয়ে রেজাউল বলেন, সমন্বয়ের অভাব আছে। সুন্দর রাস্তা করার দুই মাসের মধ্যে কোনো সংস্থা আবার কাটে। উন্নয়নের জন্য কাটতে হবে। কিন্তু কেন সরকারি টাকার অপচয় হবে? আগে মেয়ররা উদ্যোগ নিলেও সেবা সংস্থাগুলো যে প্রতিনিধি পাঠায়, তাতে ফাঁক থেকে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করব যেন দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারি। সমন্বয় সভায় সবাই যেন উপস্থিত থাকে, সে চেষ্টা করব। সমন্বয়ের অভাবে নগরবাসী যেন কষ্ট না পায়।

সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকট প্রসঙ্গে রেজাউল বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী আমি। তিনি সবার বিরোধিতা জয় করে পদ্মা সেতু করেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন। সততা, সাহস, উদ্যোগ ছিল বলেই করতে পেরেছেন। আর্থিক সংকটে আমি ভীত নই। আমার সাহস, উদ্যোগ আছে। নেত্রী আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি আছেন।

প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় প্রথমেই হাত দিতে চান রেজাউল। তারপর রাস্তাঘাট সংস্কার ও মশা উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করবেন তিনি।

শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করা, ‘কিশোর গ্যাং’ বন্ধ করা, মাদক নিমূর্ল, নগরীর বিভিন্ন অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স ও উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ, সন্ত্রাস দমন এবং নগরীতে ব্রিটিশবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন প্রতিশ্রুতি দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল।

ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যা নিরসনে স্থানীয় মহল্লার প্রতিনিধি, সব শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ এবং কাউন্সিলরদের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য সমাধান করবেন বলেও তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষে ফুল দিয়ে রেজাউলকে শুভেচ্ছা জানান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //