মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য মুনিয়ার ৬ ডায়েরি: পুলিশ

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আলামত হিসেবে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার ছয়টি ডায়েরি ও দুটি মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোসারাত জাহান মুনিয়ার নিজ হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটিকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ঘটনার শিকার নারীকে হতাশা গ্রাস করেছিল, তিনি মারাত্মক মনঃকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরি হবে। ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী পুলিশ প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য গ্রহণ করবে।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ ও ‘অভিপ্রায়’ এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরি। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ঘটনাটিকে এক সুতোয় গাঁথতে, অর্থাৎ কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছে, তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন ও পারিপার্শ্বিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সংগ্রহ করেছে। ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যু কী কারণে, সেটি জানা সবচেয়ে জরুরি।

পুলিশ উপকমিশনার বলেন, প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী যেকোনো মামলায় আসামি ধরায় কোনো বাধা নেই। আত্মহত্যার অভিপ্রায় এবং প্ররোচনাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মামলার অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করা ও একসঙ্গে নিয়ে আসা জরুরি। আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আগে পুলিশ এই কাজগুলো আগে করতে চায়। যেহেতু মামলাটি বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা, ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং মূলত আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই কাজ করব।’

পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে সন্দেহজনক কোনো যাতায়াতের তথ্য পায়নি। তরুণী যেদিন আত্মহত্যা করেছেন, সেদিন বা তার আগের দিন সায়েম সোবহান আনভীর ওই বাসায় যাননি। তবে এর আগে পরপর দুই দিন তিনি ওই বাসায় যান এবং এ-সম্পর্কিত ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের মালিক, মেয়ের জামাই ও ভবনের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেছে। পরে নিয়মিত সাক্ষ্য নেবে। ফ্ল্যাটে মোসারাতের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। ফোনগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা, মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। শরীরের অন্য কোথাও জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঝুলে থাকায় হাত-পা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা ফুলে ছিল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //