‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’

‘৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?’

বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনসহ সব জায়গায় নারীর জন্যে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছেন নারীরা। এ সময় সাক্ষ্য আইন (১৮৭২) এর ১৫৫ (৪) ধারা বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করা হয়।

‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ নামে এই কর্মসূচি থেকে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারাকে যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণবান্ধব উল্লেখ করে এটি বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

সমাবেশে ‘৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?,’ ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীন, আর কত দিন’, ‘চলন-বলন-পোশাক রাখো, রাষ্ট্র এবার দায় নাও’, ‘পুরুষের ক্ষমতা, ভেঙে হোক সমতা’, ‘পথে-ঘাটে দিনে-রাতে, চলতে চাই নিরাপদে’ এমন প্ল্যাকার্ড আর স্লোগানে মুখরিত ছিল রাজধানীর শাহবাগ।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শাহবাগ মোড় থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ অভিমুখে এই পদযাত্রা শুরু হয়। এতে সংহতি জানান বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিল্পীরা। পদযাত্রাটি রাত ১টা ৪৫ মিনিটে মানিক মিয়া এভিনিউতে পৌঁছায়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নারীরা।

‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’র অন্যতম সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে শুধুমাত্র লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে নারীদের জুলুম-অত্যাচার-বৈষম্য সহ্য করতে হয়। প্রতিনিয়ত নিপীড়নের বিচার চাইতে গেলে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট খুলে দেখাতে বলে এই রাষ্ট্র। এর বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। অবিলম্বে স্বাক্ষ্য আইন (১৮৭২) এর ১৫৫ (৪) ধারাটি বাতিল করার সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে নারীদের এই পদযাত্রা।’

ব্রিটিশ আমলে প্রণীত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্র নারী (When a man is prosecuted for rape or an attempt to ravish, it may be shown that the prosecutrix was of generally immoral character)।’

এই ধারা বাতিলের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশে ধর্ষণ হলো একমাত্র অপরাধ যেখানে অপরাধের বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অপরাধের শিকার নারীর চলন-বলন ও পোশাকের দিকে। প্রতিটি ধর্ষণের অভিযোগের পর সমাজের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈষম্যমূলক মানদণ্ড অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ঠিক না থাকলে তার সঙ্গে অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পদযাত্রার অন্যতম আয়োজক প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ ধরনের অবমাননাকর এবং বিদ্বেষমূলক চর্চা আমরা দেখতে পাই, যেগুলোর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের বৈধতা দান করা হয়। আমাদের এই পদযাত্রা এই চর্চাকে আঙুল দেখানোর জন্য। এই ব্যারিকেড আমরা ভাঙতে চাই।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //