বাসে চার্ট ঝুলিয়ে রাখলেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী গত রবিবার (১৪ নভেম্বর) থেকেই রাজধানীতে চলাচল করা বাসের সিটিং ও গেটলক সেবা বন্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শেষ দিনও সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল সিস্টেম বন্ধ হতে দেখা যায়নি। 

প্রতিদিনই এ নিয়ে যাত্রী ও বাসের হেলপারদের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছেই। বাসে চার্ট ঝুলিয়ে রাখলেও হেলপাররা চার্ট অনুযায়ী বাস ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এমনকি বাস বন্ধ রাখারও হুমকি দেন তারা। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সদুত্তর পাওয়া জানায়নি। 

এদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জানিয়েছেন, যদি ওয়েবিল বন্ধ করা না হয় এবং সরকার নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী ভাড়া না নেওয়া হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন হতে পারে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা সরকারের কাছে যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। 


এদিকে বাস ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ না হলে আইনী লড়াইয়েও যাওয়ার কথা জানালেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। 

সূত্রাপুর থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত মালঞ্চ পরিবহনে যাত্রীদের সঙ্গে বাস হেলপারের ঝগড়া বিবাদ হতে দেখা গেছে। বাসে সরকার নির্ধারিত চার্ট লাগানো থাকলেও, সে মতে ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানান চালক ও হেলপার। সরকার নির্ধারিত চার্টের ভাড়া মোহাম্মদপুর থেকে ধুপখোলা ১৪.৫ কিলোমিটারের ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছে ৩১ টাকা। কিন্তু ওয়েবিলের অযুহাতে আজ বৃহস্পতিবারও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪৩ টাকা।  অতিরিক্তি ভাড়া হিসেবে যাত্রীদের দিতে হচ্ছে ১২ টাকা।  

বাস শ্রমিককে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলে দিলেন, দুই ঘণ্টা পর আবার বাস বন্ধ হয়ে যাবে। এই কথার জের ধরে বাস যাত্রীদের সঙ্গে তার কথাকাটা কাটি হচ্ছে। 

একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন আফজাল হোসেন। তিনি জানান, প্রতিদিন জিগাতলায় অফিসে আসতে হচ্ছে। মালঞ্চ বাসের ওয়েবিল বসানো হয়েছে সিটি কলেজের সামনে। সিটি কলেজে না নামলে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বাড়তি ১৩ টাকা দিতে হচ্ছে। আর সিটি কলেজ পর্যন্ত তারা বাস ভাড়া বাড়িয়েছে ১০ টাকা। আগে ছিলো ২৫ টাকা এখন ৩৫ টাকা। এরকম হয়রানির কোনো মানে হয় না। প্রতিদিন বাস শ্রমিকদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে অফিসে যেতে হচ্ছে।  দেশের নাগরিক হিসেবে এই হয়রানি থেকে মুক্তি পাবো কবে জানি না। 

আফজাল হোসেনের মতো সব যাত্রীর একই কথা। তারা নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে যেতে চান। যাত্রীদের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চলমান নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি থেকে আইনী সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, বাসে এখন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট লাগানো হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকার যদি এর সুষ্ঠু সমাধান না জানায় তাহলে আমরা আইনী লড়াইয়ে যাব। 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান জানান, একচেটিয়াভাবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে ও পরিবহন মালিকদের দৌরাত্মকে প্রশ্রয় দিয়ে সরকার নাগরিকের অধিকার খর্ব করছে। দেশের নাগরিকদের এক হতে হবে। প্রয়োজনে আইনী লড়াইয়ে যাওয়া যেতে পারে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //