এটিএম বুথ থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ

ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে টাকা লোড-আনলোডসহ মেইনটেনেন্সের দায়িত্ব পালন করছে ‘গার্ডা শিল্ড’নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আব্দুর রহমান নামে একজন সেখানে চাকরি নেওয়ার পর প্রতারণা শুরু করেন। তার নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল আর্থিক প্রতারণার কাজ শুরু করে। প্রতিদিন ব্যাংকটির বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন তারা। গত এক বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা একই কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এই ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

রবিবার (৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‌্যাবের তদন্তে ও সিটিটিসির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রটির মূল হোতা আব্দুর রহমানসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। অভিনব কৌশলে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকটির দুই শতাধিক এটিএম বুথ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গরমিল দেখা যায়। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি আগের প্রতিষ্ঠান জি-৪ সিকিউরিটি গার্ড এজেন্সির সাথে চুক্তি বাতিল করে। নতুন করে গার্ডা শিল্ডের সাথে চুক্তি করে। কিন্তু অনিয়ম ও অর্থের গড়মিল বন্ধ হয়নি। অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি সিকিউরিটি এজেন্সি গার্ডা শিল্ড র‌্যাবের শরণাপন্ন হয়।

এরপর র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব উদঘাটন করে যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরী দলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আব্দুর রহমান বিশ্বাস, তারেক আজিজ, তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান, রবিউল হাসান, হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস, কামরুল হাসান, সুজন মিয়া ও আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে জব্দ করা হয় দুটি চেকবই, একটি এটিএম কার্ড, চারটি আইডিকার্ড, একটি স্বর্ণের নেকলেস, এক জোড়া বালা, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা।

খন্দকাল আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাতের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিগত ২৩ বছর একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে পরস্পর পরিচিত হয়। একপর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। গ্রেফতার আব্দুর রহমান চক্রটির মূলহোতা। তিনি তার এক পূর্ববর্তী সহকর্মী থেকে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেফতার অন্য সহযোগীরা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রেফতারকৃতরা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করে থাকে। এসব বুথে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে; যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে থাকেন। এছাড়া কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকতো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //