ডিবি কার্যালয়ে নোবেল সম্পর্কে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন স্ত্রী

গায়ক নোবেলের মাদকাসক্তির পেছনে এক নারী এয়ার হোস্টেস জড়িত বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। তবে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি।

আজ শনিবার (২০ মে) সকালে প্রতারণার অভিযোগে কণ্ঠশিল্পী নোবেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এর পরপরই ডিবি অফিসে উপস্থিত হন সদ্য তালাকের নোটিশ পাঠানো স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে নোবেলের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সালসাবিল মাহমুদ বলেন, নোবেলের মাদকাসক্তির পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও ইন্টারন্যাশনাল রুটে চলাচল করা বিমানের এক এয়ার হোস্টেস জড়িত। তারাই নোবেলকে মাদক সাপ্লাই দেন। এমনকি তাদের এসব বিষয় নিয়ে আমি কথা বলায় আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হতো।

তিনি বলেন, নোবেলের সঙ্গে সংসার করেছি, সে খুব ভালো একজন মানুষ। কোনো কারণে একটা চক্রের মধ্যে জড়িয়ে খুবই মাদকাসক্ত হয়ে যায়। এর পরে তার ব্যবহারে পরিবর্তন আসে এবং সে অন্যরকম মানুষে পরিণত হয়, মাদকাসক্ত মানুষে পরিণত হয়। এর পর যে ঘটনাগুলো ঘটে, সেটা নেশার ফলশ্রুতিতে এ ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে প্রচণ্ড মারধর করা হতো, তখন আমি গুলশান থানায় একটা জিডি করেছিলাম। একদিন প্রচণ্ড যখন মেরেছে তখন আমি ৯৯৯-কল দিই। সেখানে ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসে, তখন তারা এসে নোবেলকে ঠেকিয়ে আমাকে বাঁচায়। তখন তারা নোবেলকে জিজ্ঞেস করে— কেন মারছেন? নোবেল তাদেরকে বলে- আমি আসলে অনেক ধরনের জিনিস খাই, আমার মাথা ঠিক থাকে না, তাই আমি তাকে মারি।

সালসাবিল মাহমুদ বলেন, এরপর ওখান থেকে আমাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন আমি গুলশান থানায় একটা জিডি করি। এর পর আমি আর আইনগতভাবে এগোইনি। কারণ আমি চাচ্ছিলাম কোনোভাবে সে নেশাটা থেকে বের হয়ে আসুক একটা সুস্থ জীবনযাপন করুক। আমার উদ্দেশ্য তাকে শাস্তি দেওয়া ছিল না। আমার উদ্দেশ্য ছিল সে যেন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

নোবেলের সঙ্গে যুক্ত মাদকচক্র ও গায়কের নারী সম্পৃক্ততা নিয়ে তার স্ত্রী বলেন, মেয়েদের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় আমি কখনো দেখিনি তাকে। কিন্তু তাদের চক্রে একটা এয়ার হোস্টেজ চক্র কাজ করে, যেখান থেকে একজন তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং তাকে যত ধরনের মাদক সে তাকে সাপ্লাই দেয়।

ডিবি কার্যালয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, আজ ডিবি পুলিশ থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। আমি তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। তারা পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।

গায়ক নোবেলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেল একজন প্রতিষ্ঠিত গায়ক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হাইস্কুলে সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে গান গাওয়ার চুক্তি করেন তিনি। তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকাও নেন। নিজেও যাওয়ার কথা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে যাননি। টাকা চাওয়ার পর তা-ও ফেরত দেননি। এ ঘটনায় মামলা হয়, কিন্তু মামলার পরও পুলিশ কিংবা আদালতেও আত্মসমর্পণ করেননি তিনি।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে স্টেজ প্রোগ্রামে গিয়ে ভাঙচুর করা, মাতলামি করার অভিযোগ রয়েছে নোবেলের বিরুদ্ধে। তাঁর এসব অপকর্মের বিষয়ে আমরা নোবেলকে একাধিকবার বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করছেন। স্ত্রীকে মারধর করছেন। মাদকাসক্ত থাকার কারণে তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা দিয়েও যেতে পারেন না।

গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে গায়ক নোবেল, জিজ্ঞাসাবাদ চলছেগ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে গায়ক নোবেল, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন আরও বলেন, নোবেলের এসব কার্যক্রমের কারণে তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন। উত্তরাঞ্চলে একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে মাতলামি করেছেন তিনি, মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন। স্ত্রীকে মারধর করেছেন। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। 

এর আগে, অনুষ্ঠানে না গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

পরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে ঠিক কখন কোন জায়গা থেকে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় তা জানায়নি ডিবি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //