রেলযোগে ঈদযাত্রায় স্বস্তির ছোঁয়া

পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটির আমেজ এরই মধ্যে আজ (শনিবার) থেকে বেশ কিছুটা পড়তে শুরু করেছে। রাজধানীও কিছুদিনের জন্য ছুটি নিবে ব্যস্ত নগরীর চিরচেনা রূপ থেকে। যান্ত্রিক সভ্যতার অসম্ভব কর্মব্যস্ত শহরের চিরায়িত দৃশ্য পাল্টে নীরবতার অমৃত সুধাপানের অধীর অপেক্ষায় রয়েছে রাজধানী ঢাকা। থাকবে না কোলাহল, স্কুলের ঘন্টা, যানবাহনের ভেঁপু, হৈ-হুল্লোড়, বাজারের কোলাহল, নদী বা সড়কপথে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। আর ঈদ ছুটিকে উপলক্ষ্য করে সম্প্রতি বছরগুলোতে ট্রেনযোগে ভ্রমনের দিকে ঝুঁকছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষেরা। 

 তাহলে এটা হয়ত বলা যেতে পারে রেলবিভাগ তাদের নিজস্ব উৎকর্ষ সাধনের মধ্যদিয়ে যাত্রী টানতে একটি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে আন্তঃনগর ট্রেনের বগিগুলোর মান উন্নয়ন,সাশ্রয় মূল্যে টিকেটিং ব্যবস্থা, শিডিউল বিপর্যয় আগের চেয়ে কমিয়ে আনা, অনলাইন টিকেট বিতরণের মাধ্যমে সনাতনী পদ্ধতিতে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ভোর রাত থেকে একটি টিকেটের জন্য হাহাকারময় অপেক্ষাসহ নানা জটিলতা হয়তবা বেশ কমে আসার সুফল পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। 

এতকিছুর পরেও প্রযুক্তি দক্ষতা সবার জানা না থাকায় অনলাইন টিকেট প্রাপ্তিতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে গুটিকয়েক মানুষের। তবে আমাদের মধ্যেও রেল ভ্রমনে  টিকিট কাটার একটা বিশাল ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরেই এমন ভাল একটি সাড়া মানুষের মধ্যে মিলছে। এ ক্ষেত্রে টিকিট প্রাপ্তি আরও কিভাবে সহজ করা যায় সে বিষয়েও রেলকর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। প্রযুক্তির মধ্যদিয়েই এটিকে আরও সহজতর করার একটি প্রয়াস হয়ত কর্তৃপক্ষ নিতে পারে তাদের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে। 

এদিকে ঈদ যাত্রার প্রথমদিনে সকাল ৬টার পর আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। এরপর নীলসাগর এক্সপ্রেস ঘরমুখো মানুষকে নিয়ে রওনা হয় গন্তব্যের দিকে।

আর এর মধ্যদিয়েই শুরু হলো আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের যাত্রা। ১৪ জুন যেসব যাত্রী ২৪ জুনের অগ্রিম টিকিট কেটেছেন-তারা যাত্রা করবেন আজ শনিবার। এর পাশাপাশি যাত্রার দিন (২৪ থেকে ২৮ জুন) ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টার থেকে। 

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২৮ হাজার যাত্রী কমলাপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে যাবে। আর বিনাটিকিটে ভ্রমণে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কমলাপুরসহ দেশের সব স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির গণমাধ্যমকে জানান, ঈদ উপলক্ষে এক সপ্তাহ ধরেই মানুষ ট্রেনে রাজধানী ছাড়ছেন। তবে শনিবার (আজ) থেকে ভিড় বাড়বে।

তিনি জানান, ২৪ থেকে ২৮ জুন প্রতিদিন ৪১ জোড়া আন্তঃনগর এবং ৩৬ জোড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাবে।

এবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেওয়া হলেও টিকিট বিক্রিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। অনলাইনে দুই ভাগে দেওয়া হয় অগ্রিম টিকিট। ঈদযাত্রায় পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় সকাল ৮টা থেকে। আর দুপুর ১২টা থেকে পূর্বাঞ্চলে চলাচলকৃত টিকিট বিক্রি করা হয়।

গতবারের মত এবারও ঈদযাত্রায় আসনবিহীন বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হবে মোট আসনের ২৫ শতাংশ। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এসব টিকিট পাওয়া যাবে। শুধু যাত্রা শুরুর দিন এসব টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে কেনা যাবে।

এর আগে, গত ১৪ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। টিকিট বিতরণের শিডিউল অনুযায়ী ১৪ জুন দেওয়া হয় ২৪ জুনের টিকিট। অনুরূপ ১৫ জুন ২৫ জুনের, ১৬ জুন ২৬ জুনের, ১৭ জুন ২৭ জুনের এবং ১৮ জুন দেওয়া হয় ২৮ জুনের অগ্রিম টিকিট।

এ ছাড়া একইভাবে ঈদযাত্রার ট্রেনের ফিরতি অগ্রিম টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছিল ২২ জুন থেকে। আর সে হিসাবে ২২ জুন দেওয়া হয় ২ জুলাইয়ের টিকিট। যথাক্রমে ২৩ জুন ৩ জুলাইয়ের, ২৪ জুন ৪ জুলাইয়ের, ২৫ জুন ৫ জুলাইয়ের ও ২৬ জুন ৬ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হবে ফিরতি ট্রেনের টিকিট

এদিকে বেশ স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবারের ঈদ রেলযাত্রা শুরু হয়েছে বলে সবার মত। প্রথম মুহূর্তে কেনো ঝামেলা ছাড়াই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারছেন যাত্রীরা। 

আজ যেসব ট্রেন বাড়ি ফেরা মানুষের সঙ্গী হয়েছে  সেসব হলো- সকাল ৬টা ২০ মিনিটে পারাবত এক্সপ্রেস, ৬টা ৪০ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেস, সকাল ৭টায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ৭টা ১৫ মিনিটে এগারো সিন্ধুর প্রভাতী এক্সপ্রেস, ৭টা ৩০ মিনিটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস, ৮টা ১৫ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সকাল ৯টার রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেস।

গণমাধ্যম সূত্রে দেখা যায়, কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার এই ট্রেনগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

তিনি এও জানান, গত ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে ছিল না কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত ২০টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

আর এসময় আপাতত শিডিউল বিপর্যয় না ঘটায় যাত্রীরা রেলের ব্যবস্থাপনায় বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, লোকাল মেইল ও আন্তনগর ট্রেন মিলে মোট ৫২ জোড়া ট্রেনের মধ্যে আন্তনগর  ট্রেনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। 

তবে এবারে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় প্ল্যাটফর্মগুলোর বেশির ভাগই ছিল ফাঁকা। 

আর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথেষ্ট সতর্ক উপস্থিতি। 

সব মিলিয়ে তিন দফায় টিকিট যাচাইয়ের পর কেবল প্রকৃত যাত্রীদের মূল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়। 

এসময় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা রেলের এমন ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রায় বেশ আরামদায়ক একটা অনুভূতি নিয়েই বাড়ির দিকে আত্মার আপনজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ কাটাতে মহানগর ছেড়ে যাচ্ছেন কর্মব্যস্ত মানুষেরা। আশা একটাই ঈদের আনন্দের পাশাপাশি ত্যাগ আর মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আল্লাহর নামে কোরবানি করতে। আর খানিকটা সময় বিশ্রামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নগর ক্লান্তি দূরীভূত করে আত্মার প্রশান্তির খোঁজ করতে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //