পুরনো রূপে সদরঘাট

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। বাড়ানো হয়েছে দৈনিক চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যাও। পন্টুনে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমান তালে চলছে হাঁক-ডাক। সব মিলিয়ে পুরনো রূপে ফিরেছে সদরঘাট। পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায় যাত্রীরাও প্রকাশ করছেন স্বস্তি।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিকাল থেকে কম-বেশি যাত্রী আসলেও সন্ধ্যার দিকে যাত্রীর ঢল নামতে শুরু করে সদরঘাট এলাকায়। টার্মিনাল ও পন্টুনে পা ফেলার জায়গা ছিল না। দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোর ডেকে যাত্রী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ডেক, সোফা, কেবিন কানায় কানায় ভর্তি হয়েই সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে লঞ্চগুলো। যাত্রী উপস্থিতে খুশি লঞ্চ সংশ্লিষ্টরাও।

যাত্রীরা বলছেন,  ঘাটে পূর্বের মতো ভোগান্তি নেই। তবে গুলিস্তান-সদরঘাট রুটে বরাবরের মতই যানজটে নাকাল হতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে সদরঘাট পুরো রাস্তায় জট থাকায় হেঁটে আসতে হয়েছে তাদের। বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি দ্বিগুণ হলেও ঘাটে এসে সহজে লঞ্চ পাওয়া খুশি সবাই।


বরগুনাগামী যাত্রী মনিরুজ্জামান খান বলেন, বৃষ্টির কারণে আসতে ঝামেলা হয়েছে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যে পরিমাণ জ্যাম, বাস এগোতেই পারেনি। পরে বাস থেকে নেমে হেঁটে আসতে হয়েছে। তবে অগ্রিম কেবিন নেওয়া ছিল, তাই ঘাটে এসে ঝামেলা হয়নি কোনো।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নৌযাত্রীরা নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে সদরঘাট আসছেন। নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কেবিনের অগ্রিম টিকিট প্রায় শতভাগ বিক্রি আগেই শেষ হয়েছে। তবে সব রুটেই কমবেশি লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় ঘাটে এসেও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। তবে কেবিনের তুলনায় ডেকের যাত্রীর চাপই বেশি। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটে অগ্রিম টিকিট বিক্রির হার কিছুটা কম। যাত্রী টানতে গত ঈদের মতো এবারো ভাড়ায় কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন মালিকরা।

বরিশাল রুটে চলাচলকারী পারাবত লঞ্চের স্টাফ আলিমুর রহমান বলেন, অগ্রিম টিকিট মোটামুটি আগেই শেষ আমাদের। এখন ডেক আর সোফার চাহিদা বেশি। ২৬-২৭ কেবিন শতভাগই বিক্রি হয়ে ছিল, তবে ২৮-২৯ বেশ কিছু কেবিন ফাঁকা রয়েছে। তবে লঞ্চ ছাড়ার দিন বিক্রি হয়ে যাবে আশা করছি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে নাব্য সংকট ও যাত্রী স্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১৫টি নৌপথ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২৬টি নৌপথে প্রায় ৭০টি লঞ্চ নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। ঈদ ঘিরে লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় ১৮০টি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের এই কয়দিন ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে ৯০টি লঞ্চ প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসছে ৯০টি।

সার্বিক বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‌ছুটির শুরুর দিন হওয়ায় যাত্রীর চাপ স্বাভাবিকভাবে বেশি আজ। কিছু রুটে অগ্রিম টিকিট অনেকটাই বিক্রি হয়েছে। বরিশালসহ কয়েকটি রুটে যাত্রী অনেক কম। তবে আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে আমরা যেকোনও রুটে স্পেশাল সার্ভিস দিতে পারবো। যাত্রীরা লঞ্চে উঠে ডেক ও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কিছুটা কম নিচ্ছি।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটির এই কয়দিন সদরঘাটে যাত্রীর চাপ থাকবে স্বাভাবিক। আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় র‌্যাবের একটি টিম আলাদাভাবে কাজ করছে। আনসার সদস্যরাও কাজ করছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।


এদিকে যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে লঞ্চ চলাচল করবে বলা জানানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত বয়া-জ্যাকেটের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ কর্তৃপক্ষ।

সদরঘাটে বিআইডব্লিউওটির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দপ্তরের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, আগের তুলনায় যাত্রীর চাপ বাড়ছে। সোমবার থেকে পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আরো বাড়বে বলে আশা করি। চাপ বাড়লে লঞ্চও বাড়ানো হবে। মালিক সমিতিও লঞ্চ দিতে প্রস্তুত আছে। গতকালও ৯০টা লঞ্চ গেছে। আজও তেমনি যাবে আশা করছি। আমাদের মনিটরিং টিম পন্টুনে কাজ করছে, যাতে কোনও লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে না ছাড়ে। আবহাওয়ার বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //