বাস ভাড়া নির্ধারণে মালিকদের ‘প্রেসক্রিপশনে’ কাজ করে সরকার: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

সরকার পরিবহন মালিকদের 'প্রেসক্রিপশন' বা মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে বাস ও গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেন বলে অভিযোগ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। 

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রীদের অধিকার চাই' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি এমন অভিযোগ করেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে বাস মালিকদের সংখ্যা অনুপাতে যাত্রী বা ভোক্তা প্রতিনিধি রাখার বিধান থাকলেও নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেই ভাড়া নির্ধারণ করছে। ফলে থাকছে না যাত্রী ও ভোক্তাদের কোন অংশগ্রহণ। এমনকি বাস ভাড়া নির্ধারণে যাত্রীদের কল্যাণের কথা একদম বিবেচনা করা হয় না।

সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান তাওহিদুল হক লিটন সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, পরিবহন সেক্টরে চারটি স্টেক হোল্ডার থাকে। যাত্রী, মালিক, শ্রমিক ও সরকার। অথচ ভাড়া নির্ধারণের সময় মালিক ও সরকার মূখ্য ভূমিকা পালন করছে যেখানে গুরুরত্বপূর্ণ স্টেক হোল্ডার যাত্রীদের মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না সরকার। 

তাওহিদুল হক লিটন আরও জানান, আমরা এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই সংগ্রাম করে আসছি। কারণ একমাত্র আমরাই যাত্রীদের নিয়ে কথা বলা একমাত্র রেজিস্টার্ড সংগঠন। সর্বদা গণমানুষের কথা চিন্তা করে যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে এতদিন ধরে সংগ্রাম করে আসলেও, আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণের সময় মোট আসনের ৭০ ভাগ অকুপাইড ও ৩০ ভাগ খালি দেখায় মালিক পক্ষ। ফলে সঠিক ভাড়া নির্ধারণ করে জনকল্যাণে তাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

এ সময় নেতৃবৃন্দ যাত্রী তথা জনস্বার্থে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধনপূর্বক বাস ও গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে বাস মালিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার বিধান সংযুক্তের দাবি জানান।  

যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব বলেন, "যাত্রী সাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পরিবহন মালিকেরা ইচ্ছেমত পরিবহন চালাতে গিয়ে এ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করেও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে।"

আরও বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি ওঠলেও সংশোধনীতে যাত্রী বা ভোক্তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির উপদেষ্টা সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেসা খান বলেন, "এ বাস মালিক কারা আমরা সবাই জানি। রাজনীতিবিদরাই বাসের মালিক। তারা যাত্রীদের দুংখ কষ্ট নিয়ে মাথা ঘামাতে চান বলে মনে হয় না।"

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার দাবি তুলছি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। অথচ সরকার সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী সাধারণের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ রাখেনি।"

যাত্রী কল্যাণ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান তাওহিদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন, মনজুর হোসেন ইসা, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না প্রমুখ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //