‘হিন্দু আইন সংস্কারের বিরোধিতা করার যুক্তি নেই’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মিলন কান্তি দত্ত বলেন, হিন্দু আইন সংস্কারের বিরোধিতা করার কোনো যুক্তি নেই। যারা বিরোধিতা করছে তারা একদিন তাদের ভুলের জন্য আফসোস করবে।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইনের বিরোধিতা করেছিল এখন তারাই বিবাহ নিবন্ধনের জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে ঘুরে। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

সম্মেলনে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার করে নারী ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে উত্তরাধিকারসহ সকল ক্ষেত্রে সম-অধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। হিন্দু আইন সংস্কারের উদ্যোগে যে বাধা আসবে, তা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় এই সম্মেলনে।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। তিনি বলেন, ভারতের হিন্দু আইনে পুরুষদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো হিন্দু পুরুষরা যতগুলো ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব সরকার এ দেশের মুসলিম আইনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও অগ্রগতি সাধন করলেও আজ অবধি হিন্দু আইন সংশোধন হয়নি। এই আইনের আওতাভুক্ত সব নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী নিদারুণ বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। শুধু নারী হয়ে জন্মানোর কারণে কেউ পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়, যা আধুনিক পৃথিবীতে এক অবিশ্বাস্য সত্য এবং তা কেবল বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। ভারত ও নেপালসহ পৃথিবীর সকল দেশের হিন্দু আইনে নারী-পুরুষ সমঅধিকার পায়।

হিন্দু আইন সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৩তম জন্মজয়ন্তীর যুগপৎ আয়োজন হিসেবে এ সম্মেলনের মূলভাব নির্ধারণ করা হয়েছিল বিদ্যাসাগরের পথ ধরে।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু। আরো বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি সুভাষ সাহা ও রিনা রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নীরু বড়ুয়া, কোষাধ্যক্ষ পুলক রাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ভুপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঝর্ণা বাড়ই, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহযোগী সংগঠন মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপালি চক্রবর্তী, অশোক ধর, সুতপা বেদজ্ঞ, চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রসেনজিৎ বিশ্বাস, মহিলা পরিষদের আইনজীবী দীপ্তি শিকদার প্রমুখ।

সম্মেলন সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে অধ্যাপক ময়না তালুকদারকে সভাপতি এবং পুলক ঘটককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ভানুলাল দাস, রিনা রায়, সাংবাদিক সুভাষ সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ড. নীরু বড়ুয়া, জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলক রাহা, বিশিষ্ট বায়োকেমিস্ট গোকুল কৃষ্ণ পোদ্দার ও বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী সহ-সভাপতি পদে, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস যুগ্ম সম্পাদক পদে এবং মনোবিজ্ঞানী মিতা রায় চৌধুরী কোষাধ্যক্ষ্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সম্মেলন কার্যনির্বাহী পরিষদের এই নির্বাচিত ১১জনকে ৭১ সদস্যের বাকি পদগুলো আগামী একমাসের মধ্যে পুরণ করার এক্তিয়ার প্রদান করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //