রাজধানীর যানজট ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী, রোগী, অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ পথচারীরাও। যেখানে যেতে সাধারণত সময় লাগে ২০ মিনিট, যানজটের কারণে সেখানে হয়তো দুই ঘণ্টায়ও পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক জীবনের সাধারণ সকল কাজকর্ম।
জীবিকার তাগিদে কিংবা পেশাগত কারণে প্রতিদিনই ঘর থেকে বের হতে হয় এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সাম্প্রতিক দেশকালের।
রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন শামিমা বেগম। শ্যামলী থেকে ঢাকা মেডিকেলে আসতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ৩০ মিনিট, কিন্তু তার লেগেছে দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট।
তিনি বলেন, হেঁটে যে আসবো সেটাও সম্ভব না। ঢাকায় সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ হলেও যানজট কমছে না। তার মতে, যানজটের মূল কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া গণপরিবহনগুলো সড়কের মাঝে থেমে যাত্রী বাসে উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। এতে করে পেছনে থাকা গাড়িগুলোও আটকে যায়, যানজট তৈরি হয়। আর এর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। কোথাও যাওয়ার আগে চিন্তা নিয়ে বের হতে হয় যে, ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারব তো।
একটি হাউজিং লি. কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের এক্সিকিউটিভ আরাফাত হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি যানজট থাকে নিউমার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, চানখাঁরপুল মোড়, জিগাতলা, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, শাহবাগ, গুলিস্তানে। যানজট যেন আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমার অফিস মতিঝিল, আজিমপুর থেকে অফিসে যেতে সময় লাগে ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। অথচ যানজট না থাকলে ১৫ থেকে ২০ মিনিতে পৌঁছাতে পারি। ঢাকা শহরে যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। যেহেতু উন্নত শিক্ষা, ভালো চাকরিসহ ঢাকাতে সুযোগ-সুবিধা বেশি তাই মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। এছাড়া যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা, সড়ক-ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর ফলেও যানজট হচ্ছে।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যানজট বেড়ে যাওয়ায় ঠিকসময় ক্লাসে পৌঁছাতে পারছেন না ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে যে যাব তারও উপায় নেই- ভাঙা রাস্তা, ফুটপাতে দোকান, এজন্য হাঁটতেও সমস্যা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায় শনিরআখড়া থেকে আজিমপুর পর্যন্ত যেতে।
মিডলাইন পরিবহনের কন্ডাক্টার সোহেল বলেন, রাস্তাঘাটে যানজটের যে অবস্থা সারাদিনে দুই থেকে তিনটি ট্রিপের বেশি দেওয়া যায় না। খিলগাঁও থেকে মোহাম্মদপুর আসতে যে সময় লাগে ততক্ষণে আরো দুটি ট্রিপ দেওয়া যায়। কোথাও রাস্তা ভাঙ্গা, কোথাও নির্মাণ কাজ হচ্ছে, আবার ট্রাফিক সিগনালেও সময় বেশি লাগছে, এতে যানজট তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও রাস্তার সংখ্যা বাড়ছে না। তাই যানজটও বাড়ছে।
সড়কে যানবাহনের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে আসাদ গেটে এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহিন জানান, ট্রাফিক ম্যানুয়ালি পরিচালনা করতে হয়। ম্যানুয়ালি এত যানবাহন সামাল দিতে ট্রাফিক সিগন্যালে সময় বেশি লাগে। এছাড়া মানুষজন স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক মানতেও অভ্যস্ত নন।
তিনি আরও বলেন, তাড়াতাড়ি যেতে রংসাইড দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যানজট বাড়ায়। যানজট কমাতে আমরা দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনগণেরও উচিত নিয়ম মেনে চলা এবং সচেতন হওয়া।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : যানজট রাজধানী নাগরিক জীবন ঢাকা
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh