জোর করে পশু আরেক হাটে নিলেই ছিনতাই মামলা

এক হাটের পশু আরেক হাটে জোরপূর্বক নেওয়ার অভিযোগ এলে তাতে ছিনতাই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এছাড়া ডিএমপি থেকে আরও জানা গেছে, অনুমিত চৌহদ্দির এক ইঞ্চি বাইরেও হাটের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেবে না পুলিশ।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এবার ঢাকায় কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে অনুমতিপ্রাপ্ত হাটের সংখ্যা ১৯টি। এই ১৯ হাটকে কেন্দ্র করে গ্রহণ করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন থাকবে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্রাফিক ও থানা পুলিশও টহলে থাকবে।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস্) বিপ্লব কুমার সরকার সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেন, ঢাকায় আরও একটি হাট বাড়বে। সে হিসেবে এবার ২০টি হাট বসছে। এই কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে ডিএমপি কমিশনার যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তা মাঠ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। হাটকেন্দ্রিক ও হাটের বাইরে যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত ও তৎপর রয়েছে।

ডিএমপি থেকে এবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ট্রাকে যে পশু আসবে সেই পশুবাহী ট্রাকের সামনে লেখা থাকতে হবে কোন হাটে যাবে। প্রয়োজনে ব্যানারে হাটের ইজারাদারের মোবাইল নম্বর লিখে রাখবেন। কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে হাইওয়ে এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ এবং ঢাকা মহানগর এলাকায় ডিএমপি কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঢাকার পশুর হাট কেন্দ্রিক সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, নৌ-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশ সদর দপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ডিপিডিসি, ডেসকো ও ডিএনসিসির প্রতিনিধি, ঢাকা মহানগরের সব গরুর হাটের ইজারাদার, পশু ব্যবসায়ীসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই সমন্বয় সভা থেকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

সভায় অভিযোগ উঠেছে, নৌপথে কোরবানির পশু স্থানান্তরে বেশি বিশৃঙ্খলা হয়। এ পথে পশু নিয়ে টানাহেঁচড়া হয়। অনুমতিপ্রাপ্ত হাট ছাড়া যেন কোনো হাট না বসে সেটি ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ দেখবেন। নদীপথে নৌকা বা ট্রলারে গরু এলে সেগুলো নৌপুলিশ দেখভাল করবে। এক্ষেত্রে ডিএমপি নৌপুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। সমস্যা হলে ব্যবসায়ীরা থানায় ফোন করে সহযোগিতা নিতে পারবেন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

হাট পরিচালনা কমিটি হাটে স্থানীয় পুলিশের নম্বর প্রদর্শন করে ব্যানার টানাবেন। গরুর হাটে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় পুলিশ ও হাটের ইজারাদার সমন্বয় করে কাজ করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলবেন এবং সেখানে একজন ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা থাকবেন।

সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকায় দুটি স্থায়ী হাট। এর বাইরে আরও হাট বসবে। মোট ১৯টি হাটে এবার কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে। প্রত্যেক হাটে পরিবেশ পরিস্থিতি, ট্রান্সজেকশন, ভিড় বিবেচনায় আলাদা-আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ক্লিনার ক্লিন করবে, ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করবে, পুলিশ নিরাপত্তা দেবে।

তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাটে মনিটরিং করার জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে সব হাট মনিটরিং করা হবে। এবার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাটে মনিটরিং করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। পুলিশ সদস্য থাকবে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন।

তিনি বলেন, হাটের ভেতরে প্রবেশে তল্লাশি কার্যক্রম থাকবে, আর্চওয়ে থাকবে, স্থাপন করা হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। জাল টাকা চেনার জন্য মেশিন থাকবে। টাকা দ্রুত গণনার মেশিনও থাকবে। ট্রাফিকের আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকবে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে। হাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করবেন। ইজারাদাররা মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করবেন। ইজারাদারদের বলা হয়েছে তাদের মতো আলাদা ব্যবস্থা রাখার জন্য।

খ ম মহিদ বলেন, রাস্তায় যেন যান চলাচলে অসুবিধা না হয় এজন্য ইজারাদাররা ব্যারিকেড দিয়ে হাটের সীমানা নির্ধারণ করে দেবেন। এক্ষেত্রে হাটের যে সীমানা বা চৌহদ্দির বাইরে হাট বসতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স রয়েছে। পাশাপাশি জোরপূর্বক এক হাটের পশু অন্য হাটে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে ছিনতাই মামলা নেওয়া হবে, সড়কে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //