ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল রাজধানী, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও সংর্ঘষ

গতকাল শনিবার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ইস্যুতে গড়ে ওঠা এই প্ল্যাটফর্ম। একই সঙ্গে জাতীয় সরকার গঠনের দাবিও জানিয়েছে। 

আজ রবিবার (৪ আগস্ট) সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। আজ রবিবার বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা শুরু হয়।

জানা গেছে, সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

এসময় আন্দোলনকারীরাও সেখানে ঢুকে তাদের ধাওয়া দেন। এর কিছুক্ষণ পর বিএসএমএমইউর ভেতর থেকে ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী দেখা যায়। হাসপাতালের প্রাঙ্গণে রাখা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এই ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ বক্সে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। 

এদিকে চলমান এক দফা আন্দোলনে লাঠি সোটা নিয়ে প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করেছে আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা সিএমএম কোর্টের ফটকের পাশে একটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

আজ রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে ইসলামপুর থেকে লাঠি হাতে নিয়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় তারা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) প্রধান ফটকে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে। তার আগে তারা ১১ টার দিকে কোর্টের পাশে রাস্তায় থাকা একটি পুলিশের গাড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রায়সাহেব বাজারে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার পুড়িয়ে দিতে দেখা যায়। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলামকে মিছিল দিতেও দেখা যায়।

এদিকে হামলার পর সিএমএম আদালতের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে ফটকের বাইরে অপেক্ষা করছে। এ ঘটনার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ প্রশাসন কোর্ট এলাকার দিকে যায়।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের একদফা কর্মসূচির সমর্থনে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেন। এতে এই এলাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকে সাইন্সল্যাব এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।

বেলা ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।

অপরদিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের নেতৃত্বে গোলচত্বর এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে নানা শ্লোগান দিচ্ছে।

আজ সকাল থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বর এলাকায় কোনো পুলিশ দেখা যায়নি। কোনো ট্রাফিক পুলিশও নেই ওই এলাকায়। এতে অনেকের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত কোটা আন্দোলনকারী কাউকে দেখা যায়নি মিরপুর ১০ গোল চত্বরে এলাকায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh