অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মহসিন

বাংলাদেশ জাতীয় হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহসিন। তিনি দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ২০১৮ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্টে অপরাজিত ৫৭ রান করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। 

এরপর ভারতে আরেকটি টুর্নামেন্ট হয়েছিল। সেখানেও ভালো করেছেন মহসিন। তার হাত ধরে অল্প সময়েই বড় সাফল্য আসায় পৃষ্ঠপোষক কোম্পানিগুলো হুইলচেয়ার দলের পাশে দাঁড়িয়েছে।

গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলার এক অজপাড়া মরকুন গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। ধীরে ধীরে মহসিন বড় হতে লাগল; কিন্তু ছয় মাস বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হলো শিশুটি। রোগটি তাকে এমনভাবে কাবু করে ছাড়ল যে, সুস্থ-সবল পা দুটি অক্ষম করে দিল। আদরের ছেলের এমন করুণ পরিণতি দেখে বাবা আবদুল সাত্তার আর মা মরিয়ম বেগমের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। ছেলেকে ভালো করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি করলেন না তারা; কিন্তু কিছু হচ্ছিল না। বেশিরভাগ সময় ঘরের কোণে দুর্বিষহ জীবন কাটত তার। বাইরে যাওয়ার ফুরসতও থাকতো কম।

কিন্তু এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেতে মহসিনের একটা সময় মনে প্রবল জেদ চাপল। তাকে নিয়ে সব ঠাট্টা-মশকরা মনে নতুন শক্তির সঞ্চার ঘটাল। একদিন সাহস করে বাড়ির বাইরে বের হলেন তিনি। বাইরে গিয়ে তিনি দেখলেন তার বয়সি ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। খেলাটা তাকে নেশার মতো আঁকড়ে ধরল। শেষমেশ তাদের সাথে খেলায় অংশ নিলেন মহসিন। সেসময় তার কোনো হুইলচেয়ার ছিল না। তাই মাটিতে বসেই ক্রিকেট খেলতেন তিনি। এভাবেই ক্রিকেটের সাথে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়লেন মহসিন।

১৯৯৭ সাল। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সবে আইসিসি ট্রফি জয় করেছে। ততদিনে ক্রিকেটের প্রতি মহসিনের আবেগ নতুন মাত্রা পেয়ে বসেছে। মহসিন ভাবলেন, তার মতো অন্য প্রতিবন্ধীরাও নিশ্চয়ই অপমান, অপদস্থ হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন। তাদের জন্য কিছু একটা করা উচিত।

এই ভেবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেন মহসিন। সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন তিনি। মহসিনের পরিকল্পনা সফল হয় তিন বছর পর। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিম নামে দুটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। আজ অবধি সংগঠন দুটি এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। তিনটিতে চ্যাম্পিয়ন আর তিনটিতে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সংগঠন দুটির বিভাগীয় ক্লাব আছে ছয়টি। সমগ্র বাংলাদেশে ২০০-এর বেশি হুইলচেয়ার খেলোয়াড় আছেন।

মহসিন নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে বলেন, সফলভাবে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, আগামীতেও দিতে চাই। সামনে হুইলচেয়ার দলগুলোকে নিয়ে একটা বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জনের চেষ্টায় আছি। অবশ্যই দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে চাই। তাই সবসময় ক্রিকেটের সাথেই থাকি। আমি হুইলচেয়ার ক্রিকেটের বীজ গোটা বাংলাদেশে বুনে দিতে চাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //