ঘরবন্দি নারী ক্রিকেটাররা

করোনাকালে জাতীয় পুরুষ দল শ্রীলঙ্কা সফর করে এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলে। এরপর শ্রীলঙ্কা দলও বাংলাদেশ সফর করে একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে; কিন্তু নারী ক্রিকেট দলের কোনো বিদেশ সফর কিংবা নিজেদের মাটিতে কোনো সিরিজে অংশ নেওয়ার সুযোগ মেলেনি। এমনকি, নারীদের অনুশীলনও হচ্ছে না দীর্ঘদিন যাবত। 

গত ১৫ জুন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক সভায় নতুন করে তিনজন নারী ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আনা হয় আগের ১৯ জনের সঙ্গে। এটাই ভালো খবর। বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি আসর চলমান রয়েছে; কিন্তু নারী ক্রিকেটাররা রয়েছে ঘরবন্দি। গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করতে শুরু হরে। ওই বছরেই বাংলাদেশ নারী দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। তারপর থেকে আর নারীদের কোনো আসরেই অংশগ্রহণ হচ্ছে না। করোনাকালে না হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিতে আইসিসির অনুমতির প্রয়োজন। তাই বলে ঘরোয়া ক্রিকেটে নারীদের তো অংশগ্রহণে কোনো বাঁধা নেই। 

নারীরা মাঠে ফিরতেও উদগ্রীব। কারণ, তারা মনে করছে, এভাবে ঘরে বসে থাকলে তাদের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ঢাকায় নিজ বাসার সামনে মাঠে জগিংসহ শারীরিক ফিটনেসের কাজ করে যাচ্ছেন। মিরপুর-২ নম্বরে রুমানার বাসা হলেও শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রবেশের আপাতত অনুমতি মেলেনি বিসিবির পক্ষ থেকে। তাই তিনি বাসার পাশেই ফিটনেসটা ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন। 

তিনি জানান, ‘আমরা যদি এভাবে অলস সময় কাটাই, তাহলে বিশ্বের অন্যসব দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব। বিসিবি আমাদের জন্য অনুশীলন শিবির খুললে এবং খেলার আয়োজন করলে খুবই ভালো হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেওয়া আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়; কিন্তু ঘরোয়া লিগের তো আয়োজন করাই যায়।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ঈদুল আযহার পর ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করা যায় কিনা, তা নিয়ে কথাবার্তা বলছে বিসিবি। এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে বাংলাদেশে আনার বিষয়েও বিসিবি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তবে রুমানা জানান, কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। 

বাংলাদেশ নারী টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন বর্তমানে নিজ এলাকা খুলনায় অবস্থান করছেন। সেখানে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে প্রায়ই আসেন ফিটনেস অনুশীলন করতে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সালমা অবশ্য করোনাকালকে ক্রিকেটে ফেরার পথে বাধা বলেই মনে করছেন। 

তিনি বলেন, ‘মাঠে ফিরতে পারলে অবশ্যই ভালো হবে। তবে ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চয়ই সবকিছু বিবেচনা করেই আমাদের মাঠে ফেরার ব্যবস্থা করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’

বিধি-নিষেধ মেনে চলার শর্তে নারীদের অন্তত অনুশীলন এবং ঘরোয়া লিগের আয়োজন করা দরকার। বিসিবি এ ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি। যাতে করে নারীরা ক্রিকেটবিমুখ হয়ে না পড়েন।   

সর্বশেষ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ শক্তিশালী ভারতকে পরাজিত করে শিরোপা জেতে। এটা বিশাল অর্জন। চলতি বছরে নারী দল টেস্ট মর্যাদাও লাভ করে। বাংলাদেশের নারী দল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডের সঙ্গে। দুটি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ জয়লাভ করে তাদের বিপক্ষে। একই বছর এসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা লাভ করে। ২০১১ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। ওই বছরেই নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করে। ২০১৪ সালের নারী বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পের্বে খলার যোগ্যতা অর্জন করে। বাংলাদেশ নারী এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ নারী দল টেস্ট মর্যাদা লাভ করে আইসিসির কাছ থেকে। ২০১৫ সালে নারী বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির বাছাইপর্বে বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয। এ ছাড়া, এশিয়ান গেমসে ২০১০ ও ২০১৪ সালের আসরে বাংলাদেশ রৌপ্যপদক লাভ করে। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ২০১৯ সালে স্বর্ণপদক জয় করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৩৮টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৯টিতে জয়লাভ করেছে এবং ২৭টিতে হেরেছে। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৫টি ম্যাচ খেলে ২৭টিতে জিতেছে এবং হেরেছে ৪৮টিতে। বাংলাদেশ পুরুষ দল যেখানে ১৯৯৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত, সেখানে মাত্র নারী দল ২০০৭ সাল থেকে খেলছে। সেই তুলনায় নারীরা কম সাফল্য পায়নি। সেখানে হঠাৎ করেই নারীদের ক্রিকেট মাঠের বাইরে রাখা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //