নাসুম-শরিফুলের বোলিং নৈপুণ্যে চট্টগ্রামের প্রথম জয়

স্পিন ঘূর্ণিতে ঢাকার ব্যাটারদের নীল করলেন নাসুম আর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে একের পর এক উইকেট নিলেন শরিফুল। এ দুই বাঁহাতির তোপে ১৬১ রানের জবাবে মিনিস্টার ঢাকার ইনিংস থেমে গেছে মাত্র ১৩০ রানে। যার সুবাদে ১৬১ রানের পুঁজি নিয়েও ৩০ রানে জিতে জয়ের খাতা খুললো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

কিপটে বোলিংয়ে নিজের ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচ করেছেন নাসুম। বিপরীতে নিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল, মাহমুদউল্লাহ ও নাইম শেখের উইকেট। অন্যদিকে নিজের প্রথম ওভারে ১৫ রান খরচ করলেও, দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩৪ রানে নেন ৪টি উইকেট।

১৬২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আজ হাসেনি শেহজাদের ব্যাট। ইনিংসের সপ্তম ওভার পর্যন্ত উইকেটে থাকলেও মাত্র ১২ বল খেলতে পারেন তিনি। যেখানে ১ চারের মারে করেন ৯ রান। প্রথম পাওয়ার প্লে'তে ঢাকার সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৪২ রান।

এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেও রানের চাকা তরান্বিত করতে ব্যর্থ হন তামিম ইকবাল ও জহুরুল ইসলাম অমি। এ দুজনের জুটিতে ৫ ওভারে আসে ৩১ রান। ইনিংসের ১২তম ওভারে দলীয় ৭৩ রানে আউট হন তামিম। তখনও জয়ের জন্য ৫২ বলে ৮৯ রান বাকি ছিল ঢাকাআর।

তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে ৫২ রানের ইনিংস। যা একজন ট-টোয়েন্টি ওপেনারের জন্য বড্ড বেমানানই বটে। মূলত তার ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণে শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় ঢাকা। তবু এই ইনিংসের মাধ্যমে বিপিএল ইতিহাসে মুশফিকুর রহিমকে টপকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন তামিম।

দুই ওপেনার ও তিন নম্বরে নামা জহুরুল অমির (১২ বলে ১০) ধীর ব্যাটিং পুষিয়ে দিতে মিডল অর্ডারে প্রয়োজন ছিল মারকাট ব্যাটিং। কিন্তু তা করতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। যার ফলে ক্রমেই জয় থেকে দূরে সরতে থাকে ঢাকা।

ইনিংসের ১২তম ওভারে তামিম ও জহুরুলকে আউট করেন শরিফুল। আর ১৪তম ওভারে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ ও নাইমকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন নাসুম। নিজের শেষ ওভারে রাসেলকেও আউট করে চট্টগ্রামের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন এ বাঁহাতি স্পিনার।

নাসুমের স্পেলের শেষ বলে থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান শুভাগত হোম। ফলে নাসুমের বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় ৪-০-৯-৩; শেষ বলের বাউন্ডারি হলে বিপিএল ইতিহাসে পূর্ণ ৪ ওভারের স্পেলে সবচেয়ে কৃপণ বোলিংয়ের রেকর্ড হয়ে যেতো নাসুমের।

শেষ দিকে ইসুরু উদানা ৯ বলে ১৬ রান করে ঢাকার পরাজয়ের ব্যবধান কমান। তবু ইনিংসের এক বল আগেই অলআউট হয়ে যায় তারকাখচিত দলটি, চট্টগ্রাম পায় ৩০ রানের জয়।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডানহাতি ওপেনার উইল জ্যাকস খেলেছেন ২৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস। মাঝে সাব্বির দুইটি বিশাল ছয়ের মারে করেন ১৭ বলে ২৯ রান। আর শেষে তিন ছক্কার মারে ১৯ বলে ৩৭ রানের ঝড় তুলে দলকে ১৬১ রানে নিয়ে গেছেন বেনি হাওয়েল।

আগের ম্যাচের মতো আজও হতাশ করেন চট্টগ্রামের ক্যারিবীয় ওপেনার কেনার লুইস। রুবেল হোসেনের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ৯ বল খেলে মাত্র ২ রান করেন লুইস।

তবে আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস ঠিকই ঝলক দেখান নিজের সামর্থ্যের। রুবেলের তৃতীয় ওভারের শেষ দুই বলে হাঁকান জোড়া বাউন্ডারি, ইসুরু উদানার পরের ওভারে আরও দুই চারের সঙ্গে ইনিংসের প্রথম ছক্কাও মারেন জ্যাকস।

পাওয়ার প্লে' শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ওপর দিয়েও ঝড় বইয়ে দেন আফিফ-জ্যাকস। প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান আফিফ। আর চতুর্থ ও পঞ্চম বলে একটি করে চার-ছয় মারেন জ্যাকস। প্রথম পাওয়ার প্লে'তে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করে চট্টগ্রাম।

আরাফাত সানির বলে স্ট্যাম্পিং হওয়ার আগে তিন নম্বরে নামা আফিফ হোসেন ধ্রুব ১২ বল খেলে করেন ঠিক ১২ রান। অথচ দুইবার ক্যাচ দিয়েও জীবন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি কাজেই লাগাতে পারেননি এ বাঁহাতি তরুণ। পরের ওভারে ৪১ রান করা জ্যাকসকে বোল্ড করেন শুভাগত হোম।

দলীয় ৫৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে ৫.৩ ওভারে ৪৪ রান যোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান। অধিনায়ক মিরাজ সাজঘরে ফেরার আগে ৪টি চারের মারে ২৫ বলে ২৫ রান করেন। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই মিরাজকে আউট করেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সেই একই ওভারে একটি করে চার ও ছয় হাঁকান সাব্বির। এর আগে শুভাগতকে হাঁকান নিজের প্রথম ছক্কা। তবে বড় কিছুর আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি সাব্বির। তার ১৭ বলের ইনিংসে ছিল দুইটি করে চার ও ছয়ের মার।

সাব্বির আউট করার পর একই ওভারে শামীমকেও ফিরিয়ে দেন রুবেল। পরে শেষ দিকে ঝড়টা তোলেন বেনি হাওয়েল। তার ১৯ বলে ৩৭ রানের সুবাদে শেষ ৪ ওভারে ৪১ রান পায় চট্টগ্রাম। ইনিংসের একদম শেষ বলে তৃতীয় রান নিতে গিয়ে তামিম ইকবালের সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হন বেনি।

ঢাকার পক্ষে ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন রুবেল। এছাড়া আরাফাত সানি, ইসুরু উদানা, শুভাগত হোম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শিকার একটি করে উইকেট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //