টেস্ট নিয়ে মোস্তাফিজের অনাগ্রহে বিরক্ত সুজন

টেস্ট খেলা নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের অনাগ্রহে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। 

তিনি বলেন, আমি তো চাই মোস্তাফিজ টেস্ট খেলুক। কেন না? আমাদের তো এত বোলার নেই। হাতে গুনলে এবাদত, তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, রাহী... এরপর বোলার কই? বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলারই তো মোস্তাফিজ। অভিজ্ঞতা বলুন, নৈপুণ্য বলুন, টেুকনিক-টেকটিকস বলুন... মোস্তাফিজ থাকলে দলের ভারসাম্য ঠিক থাকতো। তাসকিন ও শরিফুল এমন খেলোয়াড়, যারা যেকোনও সময়ে ইনজুরিতে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মোস্তাফিজ থাকলে আমরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে পারতাম। আমি এটা জানি সাদা বলে মোস্তাফিজ ভয়ংকর। কিন্তু এটাও জানি, লাল বলেও সে প্রতিপক্ষের কাছে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

আজ শনিবার (৭ মে) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ প্রসঙ্গে সুজন এসব কথা বলেন।

মোস্তাফিজের কাছে প্রশ্ন রেখে সুজন পরে যোগ করলেন, ‘সাদা বলে হয়তো টাকার ব্যাপারটা বেশি। আইপিএল খেললে হয়তো ২-৪ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। ক্রিকেট কি টাকার চেয়ে বড়? দেশটা টাকার চেয়েও কি বড় নয়? আমরা তো টাকার জন্য খেলিনি। একজন ক্রিকেটারকে এখন মৃত্যুর সময় বিসিবির সহায়তা লাগে। ওদের তো লাগবে না। ওরা বরং অন্যদের সহায়তা করতে পারে। দেশের জন্য কেন আমি খেলব না?’

সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানেরও টেস্ট ক্রিকেটে অনীহা। গত তিন বছরে ঘরে ও ঘরের বাইরে মিলিয়ে ব্যক্তিগত কারণ, পারিবারিক কারণে বেশ কিছু টেস্ট খেলেননি তিনি। কোনো সিরিজের আগে হুট করেই সাকিবের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে দল। মূলত সাকিবকে ‘আটকাতে’-ই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ঘোষণা করেছিলেন, কে কোন ফরম্যাট খেলতে ইচ্ছুক, সেটি ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করেই কেন্দ্রীয় চুক্তি করা হবে।

সুজন মনে করেন, বোর্ড প্রধানের এমন ঘোষণা কেবল সিনিয়র ক্রিকেটারদের জন্যই ছিল, ‘পাপন ভাই বলেছিলেন খেলোয়াড়রা যে ফরম্যাট খেলতে চায় এ নিয়ে আলাপ করতে পারে। সেটা সিনিয়র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কথাটা বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে না। মোস্তাফিজের আসলে বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? ও তো সাকিব না, তামিম না, মাশরাফি বা মুশফিক না, যারা এত বছর ধরে বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে সার্ভিস দিয়েছে। আলোর ঝলকানি, টাকা পয়সা হয়তো সাদা বলের ক্রিকেটে বেশি, কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট তো বনেদি খেলা। ক্রিকেট শুরু হয়েছে টেস্ট দিয়ে।’

সাবেক এই অধিনায়কের কণ্ঠে ঝরলো আরো হতাশা, ‘মোস্তাফিজ কেন খেলতে চায় না, আমি জানি না। এটা বোর্ডই নির্ধারণ করবে, কাকে কোথায় খেলতে হবে। আপনি কি অফিসে বলতে পারেন- আমি এই কাজ করবো না, ওই কাজ করবো? আপনি এখানে কর্মী, আপনি কীভাবে বেছে নেবেন? সভাপতি বলেছিলেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যাপারে।’

সুজন স্পষ্ট করেই বললেন, মোস্তাফিজের টেস্ট খেলা উচিত, ‘সাকিব-তামিমদের বয়স ৩৪-৩৫। তাদের এখন বিরতি প্রয়োজন, তারা এটার যোগ্য। মোস্তাফিজের অবশ্যই টেস্ট খেলা উচিত। এখন তার পিক টাইম। আমরা তো বলছি না সব টেস্ট খেলতে হবে। অন্তত বছরে ৬-৮টা টেস্ট খেলা উচিত। একসময় শুনেছিলাম বায়োবাবলের কারণে খেলতে চায় না মোস্তাফিজ। তবে আমার মনে হয় না এগুলো কোনও অজুহাত হতে পারে। তাসকিন-শরিফুলরা খেলতে পারলে, তারও খেলা উচিত।’

আইপিএল থেকে মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে সুজন বলেছেন, ‘যেহেতু ওকে আমরা ছুটি দিয়ে দিয়েছি, আইপিএল খেলছে, এখন ওকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। আইপিএল খেলুক। আইপিএলে আমাদের একজন প্রতিনিধিত্ব করছে, এটা আমাদের জন্য বড় একটা ব্যাপার। আমরা চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটা টেস্ট ও খেলুক। আমি মনে করি মোস্তাফিজ বুঝবে। ওকে আমাদের দরকার। এ মুহূর্তে ওকে খুবই প্রয়োজন।’

তবে কি মোস্তাফিজ ও বিসিবির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো? সাবেক এই অধিনায়কের উত্তর, ‘ক্রিকেট বোর্ড মানেই মোস্তাফিজ, মোস্তাফিজ মানেই ক্রিকেট বোর্ড। এটা তো আলাদা কিছু না। দূরত্বের কিছু নেই। হয়তো কেউ কথাও বলেনি।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //