তীরে এসে তরী ডুবলো বাংলাদেশের

আশা জাগিয়েও জয়ের তরী তীরে ভেড়াতে পারল না বাংলাদেশ। অথবা বলা যায় বাংলাদেশকে জিততে দিল না ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান। ২১০ রানের টার্গেটে মালানের অপরাজিত সেঞ্চুরিতেই ৮ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটে টাইগারদের হারিয়ে সিরিজে শুভসূচনা করলো থ্রি লায়নসরা।

দারুণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট ফেলে দিলেও টাইগার বোলারদের সামনে যেন অভেদ্য বর্ম হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মালান। 

আজ বুধবার (১ মার্চ) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ইনিংসের শুরুতে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম। পাঁচ ওভারের মধ্যেই ছয়ের বেশি গড়ে রান তুলে ফেলেছিল টাইগাররা।

তবে ক্রিস ওকসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ৭ রান করে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের হাল ধরেন তামিম। তবে দলীয় পঞ্চাশ রানের গণ্ডি পেরোনোর পর দশম ওভারের তৃতীয় বলে ২৩ রান করে পাভিলিয়নের পথ ধরেন টাইগার কাপ্তান।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইনিংসের হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের ৪৪ রানের জুটি দলীয় এক শ’ রানের গণ্ডি পার করার আগেই ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে মার্ক উডের হাতে ক্যাচে কাটা পড়েন মুশফিক। বিদায়ের আগে ৩১ বলে ১৬ রান করেন মুশফিক।

এরপর দ্রুত সাজঘরের পথ ধরেন পোস্টারবয় সাকিব আল হাসানও। দলীয় শতরানের গণ্ডি পেরিয়ে সাকিব বিদায়ের আগে ১২ বলে ৮ রান করেন। ফলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়ে ভীষণ চাপে পড়ে গেছে স্বাগতিকরা।

তবে শান্তকে নিয়ে মাঝের সময়ে ৫৩ রানের জুটি করে ইনিংস বড় করতে চেষ্টা চালান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে আউট হন বাঁহাতি ব্যাটার শান্ত। তার ৮২ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারির মার।

এরপর দলীয় ১৬২ রানে ব্যক্তিগতও ৩১ রান করে বিদায় নেন রিয়াদও। তার বিদায়ের পর তাসের মতো ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। আফিফ ৭ ও মিরাজ ৯ রান করে আউট হলে দুইশ রানই না হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ দিকে তাসকিন আহমেদের সমান একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রান ও তাইজুলের ব্যাটে ১০ রানে ৪৭ ওভার ১ বলে ২০৯ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

বোলিংইয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে আদিল রশিদ, মার্ক উড এবং জোফরা আর্চার ও মঈন আলী প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া একটি করে সংগ্রহ ওকস ও উইল জ্যাকসের।

জবাবে রান তাড়া করতে নেমে ৬৫ রানের মধ্যেই ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই সাকিব ইংলিশ শিবিরে কাঁপন ধরান। ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৪ রানে আউট হন।

এরপর বাংলাদেশের বোলারদের সামলে উঠেছিল ইংলিশরা। তবে নবম ওভারে এসে স্টেডিয়ামে আগত দর্শকদের উল্লাসে মাতান তাইজুল ইসলাম। তার ঘূর্ণি জাদুর বল কিছুটা নিচু হওয়ায় ডেলিভারি মিস করে লেগস্টাম্প হারান ফিল সল্ট। ফলে ১৯ বলে ১২ রান করে ফেরেন সল্ট। এরপর ১৩তম ওভারে আবারও তাইজুলের ভেলকিতে ৪৫ রানের মাথায় ইংল্যান্ড ৩ উইকেট হারায়। উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের স্ট্যাম্পিংয়ে জেমস ভিন্স ৬ রান করে বিদায় হন।

কিন্তু পঞ্চম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে বেশ ভালোভাবেই জবাব দিচ্ছিল ডেভিড মালান আর উইল জ্যাকস। তাদের দুজনে মিলে দলের রান এক শ’ পার করে ফেলেন। তবে এই দুজনের ৩৮ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩১ বলে ২৬ রান করে টাইগার অফস্পিনারের বলে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে আফিফ হোসেনের ক্যাচ দেন জ্যাকস।

এরপর আবারও বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে আসছিলেন মঈন-মালান জুটি। তবে দলীয় ১৪১ রানের মাথায় মঈনকে ক্লিন বোল্ড করে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন মিরাজ। ক্রিস ওকস ব্যাটিংয়ে নামার পর হাত খুলে ব্যাটিং করতে থাকেন মালানও। তবে মালানের সঙ্গে ওকসের ২০ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। টাইগার অধিনায়ক তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৭ রান করে ফেরেন ওকস।

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে একা হাতে লড়াই করে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন মালান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১৪৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শেষদিকে আদিল রশিদ ২৯ বলে ১৭ রানের কার্যকরী ইনিংস উপহার দেন। ফলে ৮ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় পায় সফরকারীরা।

বাংলাদেশের পক্ষে বোলিংয়ে তাইজুল ইসলাম ৩ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মেহেদি মিরাজ ২টি এবং সাকিব ও তাসকিন আহমে নেন একটি করে উইকেট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //