ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১১৮ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। 

তবে পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল টাইগাররা। তবে আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য ইনিংসে ভর করে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

এতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে প্রথম কোনো সিরিজ জিতলো টাইগাররা।

এর আগে, প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো আজও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২০ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। 

সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সাকিব, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান,হাসান মাহমুদ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। বাকি দুটো হয়েছে রানআউট।

১১৮ রানের লক্ষ্যে নেমে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে করেছিল ১৫ রান। তবে থিতু হওয়ার আগেই আউট হয়েছেন লিটন দাস। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে স্যাম কারানকে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ফিল সল্টের তালুবন্দী হলেন লিটন। ৯ বলে ৯ রান করেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৩ ওভারে ১ উইকেটে ১৭ রান করেছে বাংলাদেশ।

লিটন দাসের পর রনি তালুকদারের উইকেট হারাল বাংলাদেশ। রনিকে ফিরিয়েছেন জোফরা আর্চার। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে মঈন আলির তালুবন্দী হয়েছেন রনি।  লিটনের মতো রনিও করেছেন ৯ রান। ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৩২ রান করেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ রানে এবং তৌহিদ হৃদয় ১ রানে অপরাজিত আছেন।

১১৮ রান তাড়া করতে নেমে ২৭ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস, রনি তালুকদার প্রত্যেকেই আউট হয়েছেন ৯ রান করে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন  নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তৌহিদ হৃদয়। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৫৫ রান করে বাংলাদেশ।

তবে অভিষেকে নিজের দ্বিতীয় বলেই্ উইকেট পেলেন রেহান আহমেদ। সাটামাটা এক ডেলিভারিতে ক্যাচ দিলেন তৌহিদ হৃদয়। ভাঙল ৩১ বল স্থায়ী ২৯ রানের জুটি।

লেগ স্পিনারে শর্ট, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়। ১৮ বলে দুই চারে তিনি করেন ১৭।

১১ ওভারে বাংলাদেশের রান হয় ৩ উইকেটে ৬০। ক্রিজে তখন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।  আদিল রশিদকে ছক্কায় ওড়িয়ে সমীকরণ কিছুটা সহজ করে ফেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই স্বস্তি উবে যেতে বসেছিল ইংল্যান্ড রিভিউ নেওয়ায়। তবে আম্পায়ার্স বলে বেঁচে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

লেগ স্পিনারের বলে সুইপ করেছিলেন তিনি। ব্যাটে খেলতে পারেননি। লাগতো অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে। সে সময় ২৬ রানে ছিলেন শান্ত।

আদিল রশিদের পর ছক্কা মেরেছিলেন মইন আলিকে। স্পিনারদের খুব ভালোভাবে খেলছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সে কারণেই হয়তো জফ্রা আর্চারকে আক্রমণ ফিরিয়েছিলেন জস বাটলার। কাজে লেগেছে এই বোলিং পরিবর্তন, মিলেছে উইকেট।

অফের দিকে সরে গিয়ে আর্চারকে পুল করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। টাইমিং হয়নি, মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন আদিল রশিদ। ভাঙে ৩২ বল স্থায়ী ৪১ রানের জুটি।

১৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯৭। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী সাকিব আল হাসান। খুব বেশি রান প্রয়োজন নেই, ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে দলকে লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবুও ঝুঁকি নিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক এর মাশুল দিলেন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে।

মইন আলির অফ স্পিন ইনসাইড আউটে ওড়াতে চেয়েছিলেন সাকিব। টাইমিং করতে পারেননি, ক্যাচ যায় ক্রিস জর্ডানের হাতে। ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো আউট হলেন শূন্য রানে।

১৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১০২। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী আফিফ হোসেন। পরপর তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের পর ফিরে গেলেন আফিফ হোসেন।

জফ্র আর্চারের দ্রুত গতির ডেলিভারির কোনো জবাব জানা ছিল না আফিফের। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প! ৩ বলে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ২ রান।

৪ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ৩ উইকেট নিলেন আর্চার। জাগিয়ে তুললেন ইংল্যান্ডের আশা।

১৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১০৫। শেষ ২ ওভারে ১৩ রান চাই স্বাগতিকদের। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী তাসকিন আহমেদ। এরপর ১৮.৫ ওভারে তাসকিন ৪ মেরে বাংলাদেশকে কাঙ্খিত ঐতিহাসিক জয় উপহার দেন। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১১৭ (সল্ট ২৫, মালান ৫, মইন ১৫, বাটলার ৪, ডাকেট ২৮, কারান ১২, ওকস ০, জর্ডান ৩, রেহান ১১, রশিদ ১*, আর্চার ০; তাসকিন ৪-০-২৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, নাসুম ১-০-১৩-০, সাকিব ৩-০-১৩-১, হাসান ২-০-১০-১, মিরাজ ৪-০-১২-৪, শান্ত ১-০-৯-০, আফিফ ১-০-৭-০)

বাংলাদেশ: ১৮.৫ ওভারে ১২০/৬ (লিটন ৯, রনি ৯, শান্ত ৪৬*, হৃদয় ১৭, মিরাজ ২০, সাকিব ০, আফিফ ২, তাসকিন ৮*; কারান ৩-০-১৫-১, ওকস ১-০-৭-০, আর্চার ৪-০-১৩-৩, মইন ৪-০-২৪-১, রশিদ ৪-০-২৮-০, রেহান ২-০-১১-১, জর্ডান ০.৫-০-১৫-০)

ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //