বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন বড় হলো বাংলাদেশের

হঠাৎই ক্রিকেট নিয়ে আশাটা বেড়ে গেল। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে যে ধাঁচের ক্রিকেট খেলছে। সিরিজ জিততে না পারলেও শেষ ওয়ানডেতে ইংলিশদের হারানোর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিনটি ম্যাচই জিতেছে সাকিব আল হাসানের দল। একই পরিণতির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের পাশের দেশ আয়ারল্যান্ডও। কিন্তু বৃষ্টির কল্যাণে হোয়াইটওয়াশ থেকে বাঁচলেও সিরিজ বাঁচাতে পারেনি। 

শেষ ম্যাচটা তো ১০ উইকেটে হেরে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও একটু উঁচতে নিয়ে গেছেন। এর দিন দুয়েক আগে ভারত দেখেছে উল্টো দিক। স্বাগতিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১০ উইকেটে হেরেছে রোহিত শর্মার দল। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা তাই সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা দেখছেন। বিশেষ করে যখন খেলাটি ভারতের মাটিতে, তখন টাইগারদের ফেভারিট হিসেবে ভাবা হচ্ছে। 

আর সব আশাটা এক জায়গায় এসে মিলেছে যখন কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহ দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কারণে দলে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, দলটার বারোটা বাজিয়েছেন, এমন কথা শুনতে হয়েছে। অথচ এই শান্তই এখন দলের সেরা ব্যাটসম্যান।

হাথুরুর আগের মেয়াদে যে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে নানা কথা হতো, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সংবাদ সম্মেলনেও সেই অবস্থা যেন উড়ে গেছে। এই লংকানের হাত ধরে দ্বিতীয় সিরিজেই সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন মুশফিক। উইকেটের পেছনেও আগের সেই ভুলগুলো করছেন না। অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালও দারুণ করছেন। 

আর স্পিনারদের দখলদারী হিসেবে উপমহাদেশের দেশগুলোর পরিচিতি হলেও বাংলাদেশ সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে। এখন এলান ডোনাল্ডের হাত ধরে পেস বোলিংয়ে নতুন উচ্চতায় লাল-সবুজের দল। সব হিসেবেই বাংলাদেশ এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় শক্তি। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যে দুর্বলতা ছিল সেগুলোও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অন্ততপক্ষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সেটা বোঝা গেছে।

ইংলিশরা টেস্ট না খেললেও আয়ারল্যান্ড একটা পাঁচদিনের ম্যাচ খেলবে। সেখানে দীর্ঘদিন পর মাঠে নামা দলটার পরিবর্তন দেখতে পাবেন দর্শকরা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নটা আরও বড় হলো। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ক্রিকেট সব সময়ই অনিশ্চয়তার খেলা। যার অনেক উদাহরণ আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। সেদিক থেকে দেখলে তুলানামূলক সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা কিছুটা হলেও বেশি চাপের। 

জিতলে খুব একটা প্রশংসা পাওয়া যায় না, কিন্তু হারলেই চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার! তবে বাংলাদেশ ভুল করেনি। মাঠে প্রভাব বিস্তার করে দাপুটে ক্রিকেট খেলে সিলেট স্টেডিয়ামে যে প্রদর্শনী হলো, তাতে যোগ হলো নতুন এক অধ্যায়। ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে এ যেন এক অন্য বাংলাদেশের ছবি। টি-টোয়েন্টির তৌহিদ হৃদয় ওয়ানডেতে নতুন স্বপ্নের বাহক হিসেবে প্রায় প্রমাণ করে ফেলেছেন। অভিজ্ঞ মুশফিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলেও তার ব্যাট এখনো কতটা ধারালো তার প্রমাণ পাওয়া গেল। ওয়ানডেতে কার্যকর হয়ে উঠলেন নতুন পেস সেনসেশন হাসান মাহমুদ। প্রাপ্তির খাতায় সংযোজন হচ্ছে দারুণ কিছু অর্জন। 

দারুণ সব স্মৃতি সঙ্গী করে সময় এখন শুধুই উপভোগের, যা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাওয়াশ করার পর ফরম্যাট পাল্টে গেলেও লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সাফল্যের গাড়ি থামেনি। পরে দেখা গেছে, ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ আরও ভয়ঙ্কর। সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত থাকুক বিশ্বকাপ পর্যন্ত।