দুর্দান্ত মুশফিকুর রহিম

কোচ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর দারুণ সময় পার করেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন। হাথুরুর আমলে যেমন অধিনায়ক হিসেবে মাত করেছিলেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, ঠিক তেমনি টেস্ট কাপ্তান হিসেবে মুশফিকুর রহিমকে নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। 

সংবাদ সম্মেলনে মুশিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, টস জিতে কি নেব সেটা তো ড্রেসিংরুম থেকে ঠিক করা থাকে। সে সময় এই লংকান কোচের অতিমাত্রায় খবরদারির বিষয়টি কমবেশি সবারই জানা। দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরু যখন বাংলাদেশে আসেন তখন ধারণা করা হয়েছিল এবার হয়তো মুশফিককে চিরতরে বাদই দিয়ে দেওয়া হবে। কারণ ব্যাট হাতে সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের। 

অথচ হাথুরুর এবারের মেয়াদেই দারুণ সফল মিস্টার ডিপেন্ডেবল। আর সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ম্যাচসেরা হয়ে তো জানান দিয়েছেন এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি।

চলতি বছরেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর বসবে ভারতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে একরকম বাতিলের খাতায়ই ছিলেন মুশফিক। কিন্তু দুটি সিরিজ দুর্দান্ত কাটিয়ে এখন অটোচয়েজে পরিণত হয়েছেন তিনি। নানা সময়ই চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে মুশফিককে নিয়ে কথা বেশি হতো। এই যেমন করোনা ভাইরাসের সময় গলির রাস্তায় দৌড়ে নিজেকে ফিট রেখেছেন। 

খারাপ খেলার পর সংবাদ কর্মীদের বলতে শোনা গেছে, আমি যখন ভোরে দৌড়াই আপনারা তখন ঘুমে থাকেন। তবে পরিণত মুশফিককে সর্বশেষ দুই সিরিজে পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই। বিসিবি সভাপতি তো এককাঠি এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, তার কাছে সবসময়ই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। 

দলের মধ্যে দীর্ঘদিন পর ভারসাম্য এসেছে বলেও জানিয়েছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের কাছে মুশফিকের ফর্মে ফেরা বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত করেছে।

আইরিশদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দারুণ এক সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল মুমিনুল হকের, ১১টি। শুধু স্কিল পরীক্ষাই নয়, শারীরিকভাবেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয় মুশফিককে। তবে সব চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন তিনি। ১২৬ ও অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন। 

৮৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে সাবেক অধিনায়ক মুশফিক ষষ্ঠবার ম্যাচসেরা বা ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন। ছয় বার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক সাকিবও। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বগুড়ার এই ক্রিকেটার চলতি সিরিজে ১৪ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই রান পূর্ণ করেন মুশি। ৮৫ টেস্টে ৫৪৯৮ রান, ২৪৫ ওয়ানডেতে ৭০৪৫ রান ও ১০২ টি-টোয়েন্টিতে ১৫০০ রান করেছেন মুশফিক। 

তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মুশফিকের রান এখন ৪৩২ ম্যাচে ৪৭৯ ইনিংসে ১৯টি সেঞ্চুরি ও ৭৫টি হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪০৪৩। মুশফিকের আগে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান পূর্ণ করেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম। ৩৮১ ম্যাচের ৪৪৩ ইনিংসে ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৯৩টি হাফ সেঞ্চুরিতে ১৫০৪৫ রান আছে তার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //