প্রথম দিনে সাড়ে তিনশ পেরিয়েও অতৃপ্তিতে বাংলাদেশ

প্রথম দিনে খেলা হয়েছে স্রেফ ৭৯ ওভার। তাতেই বাংলাদেশ তুলেছে ৫ উইকেটে ৩৬২। খেলা শুরুর আগে এই স্কোর বলা হলে, খুশি মনেই মেনে নেওয়ার কথা সবার। তবু এই অতৃপ্তির কাঁটা মূলত আফগান বোলিংয়ের মানের কারণে।

৫ উইকেট পড়েছে বটে। তবে উইকেট নেওয়ার মতো ৫টি বল সারাদিনে হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা যায়। এমনকি ভালো জায়গায় টানা বোলিং করে যেতে পারেননি আফগানরা। বরং আলগা বল হয়েছে প্রায় প্রতি ওভারেই। বিশেষ করে দুই স্পিনার আমির হাজমা হোতাক ও জাহির খান ছিলেন একদমই নির্বিষ। রান করার সুযোগ তারা দিয়েছেন প্রচুর। বাংলাদেশের পাঁচ উইকেটেই চারটিকেই বলা যায় ব্যাটসম্যানের উপহার।  

২৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু সাবধানী হলে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৩ ছাড়িয়ে দিন শেষে অপরাজিত থাকতে পারতেন তিনি। ১৪৩ রানে বোল্ড হয়ে‘নো’ বলের কারণে টিকে গিয়েও খানিক পর আউট হয়ে যান তিনি বড় শট খেলার চেষ্টায়। মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৬ রানের ইনিংসটি যেমন অনায়াসে যেতে পারত শতরানে।

শান্ত আর জয়ের দুইশ রানের জুটি যখন চলছে, ড্রেসিং রুমে বসে নিশ্চয়ই আফসোসে পুড়ছিলেন জাকির হাসান। অল্পতেই ফিরে যাওয়ায় এমন আলগা বোলিং তিনি খেলতে পারেননি। তবে আউট হওয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভালো বলে ফিরেছেন কেবল তিনিই।

শান্ত-জয়ের পর উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দায়ে কাঠগড়ায় তোলা যায় মুমিনুল হক ও লিটন কুমার দাসকেও। দিনটি পুরোপুরি বাংলাদেশের হওয়ার পরও তাই ঠিক মন ভরছে না যেন।

দিনের শুরুতে নেতৃত্বের অভিষেকে টস ভাগ্যকে পাশে পাননি লিটন কুমার দাস। অধিনায়কত্বের প্রথম টেস্টে টস জিতে বোলিং নেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি।

প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল আর তৃতীয় বলে জয়ের বাউন্ডারিতে শুরু হয় ম্যাচ। দ্বিতীয় ওভারেই আফগান উল্লাস। অভিষিক্ত নিজাত মাসুদ উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডেলিভারিতেই। তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ব্যাটে আলতো ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন জাকির হাসান।

আফগানদের সেই হাসি অবশ্য মিলিয়ে যায় দ্রুতই। উইকেটের সহায়তা নেওয়ার মতো বোলিং করতে পারেনি পেসাররা। তা কাজে লাগিয়ে শান্ত রান বাড়ান তরতরিয়ে। জয় আটকে আরেক রাখেন আরেকপ্রান্ত।

ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ইয়ামিন আহমাদজাইকে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন শান্ত। এরপর তার রান রথ ছুটতে থাকে। আলগা বল পেলেই তা কাজে লাগান তিনি। কখনও কখনও তার সঙ্গে যোগ দেন জয়।

২০ ওভার হওয়ার আগেই পঞ্চাশে পৌঁছে যান শান্ত। তাতে বাউন্ডারিই ১০টি। ৫৮ বলের ফিফটি এখনও পর্যন্ত তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্রুততম।

লাঞ্চের আগেই ১১৬ রান তোলে বাংলাদেশ, শান্তর রান তখন ৬৪।

বিরতির পরপর মাসুদের বলে তিন বাউন্ডারিতে আবার ছুটতে শুরু করেন শান্ত। সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১৮ বলে।

এর একটু আগে জয় ফিফটি পূর্ন করেন ১০২ বলে। দুই-তিন দফায় বড় শট খেলার চেষ্টায় তিনি ভুল করলেও পার পেয়ে যান। তবে ৭৬ রানে আর রক্ষা পাননি। উইকেট হারান রহমত শাহর নির্বিষ এক বলে।

জুটি ভাঙতে টেস্টে প্রথমবার বল হাতে নেন শাহিদি। তাতে কাজ হয়নি। পরে আক্রমণে আনেন তিনি আরেক অনিয়মিত বোলার রহমতকে। তার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে লেট গ্লাইড করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন জয়। 

শান্তর সঙ্গে তার জুটি থামে ২১২ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমানের ২৩২ রানের রেকর্ড রয়ে যায় অক্ষত।

এই জুটি ভাঙার পর আফগানদের ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশই। মুমিনুল হক শুরু থেকেই ছিলেন বেশ নড়বড়ে। পরে একটি ছক্কা ও চার মারলেও তার ১৫ রানের অস্বস্তিময় ইনিংস শেষ হয় নিজাত মাসুদের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে।

লিটন ক্রিজে যাওয়ার পরপরই মারেন দারুণ এক শটে ছক্কা। কিন্তু জাহির খানের ঝুলিয়ে দেওয়া ‘রং আন’ ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি ৯ রানে। যে বলটি তিনি ছাড়তে পারতেন সহজেই।

মুমিনুল-লিটনের মাঝে বিদায় নেন শান্ত। ১৪৩ রানে মাসুদের শর্ট বল স্টাম্পে টেনে ‘প্লেড অন’ হলেও তিনি টিকে যান ‘নো’ বল হওয়ায়। তার পরও ওই ওভারেই বারদুয়েক আবার একই শট খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। একটু পর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে হামজাকে উড়িয়ে মেরে সহজ ক্যাচ দেন মিড উইকেটে।

বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ২৯০। হঠাৎই একটু যেন অস্বস্তির ছাপ। তা দূর হয় মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। রান তুলতে কোনো বেগ পেতে হয়নি তাদের। এই বোলিংয়ের বিপক্ষে যেমন খেলা উচিত, দুজন ঠিক সেভাবে ব্যাট করেই এগিয়ে নেন দলকে। বিশেষ করে মিরাজ খেলেন দারুণ কিছু শট।

দিন শেষে ৭ চারে ৪৩ রান করে অপরাজিত মিরাজ, ৪১ রানে মুশফিক। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৭২ রানের।

অনেক আলগা ডেলিভারির পাশাপাশি আফগানরা এক দিনেই ‘নো’ বল করেছে ১৫টি। বল করতে অনেক সময়ও নিয়েছে তারা। গরমের কারণে অতিরিক্ত পানি পানের বিরতি তো ছিলই। আধ ঘণ্টা বাড়তি সময় নেওয়ার পরও তাই সারা দিনে খেলা হয়েছে স্রেফ ৭৯ ওভার।

বাংলাদেশ ওভার প্রতি রান তুলেছে সাড়ে চারের বেশি। এই ৩৬২ রান টেস্টের প্রথম দিনে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ। মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে শেষটাও হয়েছে দাপটে। তার পরও অস্বস্তিটুকু থাকছে, আরও কেন ভালো নয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৯ ওভারে ৩৬২/৫ (জয় ৭৬, জাকির ১, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, মুশফিক ৪১*, লিটন ৯*, মিরাজ ৪৩*; ইয়ামিন ৭-১-৩২-০, মাসুদ ১৩-২-৬৭-২, করিম ১০-৩-৩২-০, জাহির ১৬-০-৯৮-১, হামজা ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //