তামিমের অবসর নিয়ে ক্রিকেটে ভুল বার্তা!

তামিম ইকবাল হঠাৎ করেই ঝড় তুলেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেই ঝড়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়েছিল লাল-সবুজ ক্রিকেট।

বিশ্বকাপের যখন তিন মাস বাকি তখন দলের অধিনায়কই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন। বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি খেলেই বিদায় বলেন। তোলপাড় হওয়া এই অবসর দেশ ছাপিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসিকেও।

তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভুল বার্তা ছিল। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার পর আরেকজন অধিনায়কের বিদায়টা হতে হতে হলো না মাঠের বাইরে থেকে। মাঠ থেকে বিদায় না নেওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেটি পরোক্ষভাবে ক্ষতি করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। সে হিসেবে ৬ জুলাই তারিখটা হতাশার হয়ে থাকত টাইগার ক্রিকেটে। 

তামিমের অবসর বিশ্বকাপ পরিকল্পনা উলট-পালট করে দিচ্ছিল। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি কী কারণে তামিমের এই অবসর- সেটিও আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। অবশ্য অবসর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পর অবসান হয় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। 

এ ঘটনায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের নাম উঠে এসেছিল, তারাও বড় সমালোচনা থেকে বেঁচে গেলেন। তবে ক্রিকেটে ছড়িয়ে গেল ভুল বার্তা। কারণ তামিমকে ফেরাতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্যোগী হতে হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ড, খেলোয়াড়দের কেউই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। বিসিবির পক্ষ থেকে কেউ তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারেনি। পরে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। 

আর প্রধানমন্ত্রীর ডাক উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। ম্যাশ ডাকেন তামিমকে আর প্রধানমন্ত্রী খবর দেন বিসিবি সভাপতি পাপনকে। এরপর তিন পক্ষ এক হলে কেটে যায় ধোঁয়াশা। জাতীয় দলে ফিরতে সম্মত হয় তামিম। তবে দেড় মাসের বিশ্রাম দেওয়া হয় তাকে। একবারে ফিট হয়ে এশিয়া কাপে ফিরবেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। এরপর তো অনেক প্রত্যাশার বিশ্বকাপ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তামিম বিশ্বকাপে মেন্টর হিসেবে মাশরাফিকে চেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ মন্তব্য করেছেন।

মূলত অনেকগুলো সমস্যা একসঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণেই অবসরের মতো কঠিন সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন তামিম। প্রথমত বাংলাদেশে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহেকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন তামিম। যা বিসিবি বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। এখন সেই হাথুরুই তামিমের বিদায়ে নিজেকে টেনে এনেছেন। দ্বিতীয়ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্বকাপের দলে চাইছিলেন তামিম। যা কোচ ও বোর্ডের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। রিয়াদ সিনিয়র হিসেবে আরেকটা বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেতেই পারেন। তার বিদায়টা যেন সম্মানজনক হয়। 

তৃতীয়ত নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রায়ই কটু কথা শুনতে হতো। বিসিবি সভাপতি এসব বিষয় নিয়ে কোচের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। চতুর্থত দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদের মধ্যে কাকে ওয়ানডেতে খেলাবেন এটা নিয়েও তামিম নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এছাড়া ইনজুরি নিয়ে অস্বস্তি থাকায় নিজে কতটা ফিট সেটা যাচাই করতে প্রথম ওয়ানডে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। এতে বিসিবি সভাপতি তার ভূমিকাকে দেখেছেন অপেশাদারিত্ব হিসেবে আর কোচ হাথুরুও বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এটি যখন মিডিয়াতে চলে আসে তখন তামিম বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। 

ক্রিকেট যে বাংলাদেশের কতটা আবেগের খেলা সেটা তামিমের অবসরকাণ্ডে আবারও প্রমাণ হলো। বার্তা দিয়ে গেল বিসিবিকে আরও বেশি পেশাদার হতে হবে, সেটা অন্ততপক্ষে খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো নিয়ে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি বিসিবিকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //