শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে শুরু করে ১৯৭৫ সালে। ষষ্ঠবারই তারা বিশ্বকাপ শিরোপা লাভ করে ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলে এবং ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গেছে ২০১৯ সালে। ভারত দুইবার ও পাকিস্তান একবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা লাভ করেছে। ভারত একবার ও পাকিস্তান একবার রানার্সআপও হয়েছে। শ্রীলঙ্কা দুইবার রানার্সআপ হয়েছে বিশ্বকাপে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের তিন প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ জিতে প্রমাণ করেছে-----ক্রিকেটে দক্ষিণ এশিয়া কতটা শক্তিশালী। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকেই সুনাম অর্জন করেছে, যেটা অন্য কোনো খেলা থেকে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, আন্তর্জাতিক কোনো শিরোপাই জেতেনি। আমরা কি কখনো শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখেছি? যদি দেখেই থাকি, তার জন্য কি প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি? আসলে আমাদের স্বপ্নই দেখা হয়নি।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো একবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শেষ চারে ওঠা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কখনো কোনো বড় স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়নি। বিসিবি আজ বাংলাদেশের ক্রীড়া ফেডারেশন বা সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি ও সম্মানিত। কিন্তু এটা তাদের নিজেদের কর্মের ফল নয়। বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে যতটুকু মর্যাদা পেয়েছে, তা শুধু খেলোয়াড়দের চেষ্টার কারণেই। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির শিরোপা জিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। সেটাতে বোর্ডের কোনো কৃতিত্ব নেই। আইসিসি ট্রফির প্রস্তুতির জন্য কোনো মাঠ পায়নি ক্রিকেটাররা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের জন্য যে পিচ তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে সেটাও খুঁড়ে ফেলা হয়েছিল চক্রান্ত করে। প্রতিবাদে ক্রিকেটাররা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাটবল নিয়ে প্রতীকী অনুশীলনও করেছিল। ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে না পারলেও ট্রফি দেশে আসার পর বিসিবির কর্মকর্তারা ক্রেডিট নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আইসিসি ট্রফির শিরোপা জয় এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আমূলই বদলে দেয়। আর তখন থেকে বোর্ড কর্মকর্তাদের ভাব পাল্টে যায়। এখন যা হচ্ছে তা হলো, ক্রিকেটারদের কৃতিত্বকে কুক্ষিগত করে তারা হাওয়ায় ভেসে চলছেন, কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা লাভের স্বপ্নও দেখছেন না।
বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই শুধু নয়, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে পারেনি। এশিয়া কাপে ভারত ছয় বার, পাকিস্তান দুই বার এবং শ্রীলঙ্কা পাঁচ বার শিরোপা জিতেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ক্রিকেটেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা শিরোপা জিতেছে। সব বড় বড় আসরে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কা শিরোপা পেলেও বাংলাদেশের কাছে এখনো অধরা সেই শিরোপা।
সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ আসর। আমরা তো খেলোয়াড়দের মনে শিরোপা জেতার মন্ত্রণা ও প্রেরণা দিতে পারি। এশিয়া কাপের শিরোপা কিংবা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখাতে পারি খেলোয়াড়দের। প্রেরণা তো দূরের কথা, বিসিবির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেশের নামিদামি খেলোয়াড়দের মু-ুপাত করতে দ্বিধা হয় না। যারা আইকন ক্রিকেটার, তারা কি কেউ শান্তিমতো অবসরে যেতে পেরেছেন? বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার তামিম ইকবালের অবসর সুখের হয়নি। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মি. ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম, মিডলঅর্ডারের ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরাও দিন গুনছেন ক্যারিয়ারের শেষবেলাটায় মাশরাফি ও তামিমের মতো অবস্থা দেখার জন্য।
আসলে এসব হচ্ছে, আমাদের বড় ও মর্যাদার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন না থাকার কারণে। সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ; চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও রয়েছে। একটা শিরোপা পেতেই হবে, সেই বিশ্বাসটা আমাদের থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বাংলাদেশ ক্রিকেট শিরোপা বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিসিবি
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh