দায়িত্বে থাকছেন যারা

যে কোনো ম্যাচ বা টুর্নামেন্টেই ম্যাচ অফিসিয়ালদের গুরুত্ব অপরিসীম। মঞ্চটা যদি হয় বিশ্বকাপ, ম্যাচ অফিসিয়ালদের গুরুত্ব বেড়ে যায় আরও। যেনতেন রেফারি বা আম্পায়ারদের দিয়ে তো আর বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করা যায় না!

এবারের বিশ্বকাপের জন্যও তাই সম্ভাব্য সেরা আম্পায়ারদের বেছে নিয়েছে আইসিসি। ভারতের মাটির আসন্ন ১০ দল ও ৪৮ ম্যাচের বিশ্বকাপ পরিচালনার জন্য সব মিলে ২০ জন ম্যাচ অফিসিয়াল বা আম্পায়ার নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন ফিল্ড আম্পায়ার ও টিভি আম্পায়ার (থার্ড আম্পায়ার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি ৪ জন পালন করবেন ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব। মানে ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে সবচেয়ে গুরু দায়িত্বটা পালন করবেন ৪ জনে।

বাছাই করা ১৬ আম্পায়ারের ৪ জনই ইংল্যান্ডের। ৩ জন অস্ট্রেলিয়ার, ২ জন করে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার। বাংলাদেশ, স্বাগতিক ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলেও তাদের একজন আম্পায়ার এবং একজন ম্যাচ রেফারি ভারত বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বিশ্বকাপে জায়গা না জিম্বাবুয়েরও একজন ম্যাচ রেফারি নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের কোনো আম্পায়ার নির্বাচিত হননি।

ইংল্যান্ডের ৪ জন 

মাইকেল গফ
বয়স ৪৩। আম্পায়ার হিসেবে ৩০টি টেস্ট, ৭৭টি ওয়ানডে ও ২২টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। মেয়েদের ক্রিকেটেও ৬টি ওয়ানডে ও ১১টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে।

রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ
বয়স ৬০। আম্পায়ার হিসেবে ৬৪টি টেস্ট, ৭৮টি ওয়ানডে ও ২৭টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। মেয়েদের ক্রিকেটেও দায়িত্ব পালন করেছেন ১টি টেস্ট, ৬টি ওয়ানডে ও ১১টি টি-টোয়েন্টিতে। পাশাপাশি ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রিচার্ড কেটলবোরো
বয়স ৫০। পরিচালনা করেছেন ৮০টি টেস্ট, ৯৬টি ওয়ানডে ও ৩৬টি টি-টোয়েন্টি। মেয়েদের ক্রিকেটে পরিচালনা করেছেন ৪টি ওয়ানডে ও ২টি টি-টোয়েন্টি। দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে। এছাড়া ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল এবং ২০১৯ সালে ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালও পরিচালনা করেছেন তিনি।

অ্যালেক্স হোয়ার্ফ
বয়স ৪৮। পুরুষ ক্রিকেটে ৪টি টেস্ট, ১২টি ওয়ানডে ও ৩৬টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ২টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। মেয়েদের ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করা এই আম্পায়ার পুরুষদের বিশ্বকাপে ডাক পেয়েছেন এবারই প্রথম।

অস্ট্রেলিয়ার ৩ জন

পল রাইফেল
বয়স ৫৭। পুরুষ ক্রিকেটে ৬২টি টেস্ট, ৭৯টি ওয়ানডে, ২৭টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ৩টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে।

রোড টাকার
বয়স ৫৯। পুরুষদের ক্রিকেটে ৮১টি টেস্ট, ৯২টি ওয়ানডে, ৫২টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ১টি টেস্ট, ৬টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করা এই আম্পায়ার পরিচালনা করেছেন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল।

পল উইলসন
বয়স ৫১। পুরুষদের ক্রিকেটে ৮টি টেস্ট, ৩৬টি ওয়ানডে, ২৬টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ১টি টেস্ট, ৮টি ওয়ানডে ও ১টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। দায়িত্ব সামলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপে।

নিউজিল্যান্ডের ২ জন

ক্রিস গাফানি
বয়স ৪৭। পুরুষদের ক্রিকেটে ৪৯টি টেস্ট, ৭৭টি ওয়ানডে, ৪৩টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ৩টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে।

ক্রিস ব্রাউন
বয়স ৫০। পুরুষদের ক্রিকেটে ৭টি টেস্ট, ২২টি ওয়ানডে, ৪৭টি টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি মেয়েদের ক্রিকেটে ৮টি ওয়ানডে ও ৬টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া মেয়েদের ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ২ জন

মারিয়াস এরাসমান
বয়স ৫৯। পুরুষদের ক্রিকেটে ৭৮টি টেস্ট, ১১৫টি ওয়ানডে, ৪৩টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ক্রিকেটে ১৮টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার পাশাপাশি ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল এবং ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালেও ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আদ্রিয়ান হোল্ডস্টোক
বয়স ৫৩। পুরুষ ক্রিকেটে ৭টি টেস্ট, ৪৮টি ওয়ানডে, ৫০টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১৭টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। দায়িত্ব সামলেছেন পুরুষদের ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।

বাংলাদেশের ১ জন

শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ (শরফুদ্দৌলা সৈকত)
বয়স ৪৬। পুরুষদের ক্রিকেটে ৯টি টেস্ট, ৫২টি ওয়ানডে, ৪৩টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১৩টি ওয়ানডে ও ২৮টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাই, মেয়েদের ২০১৮ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৯ বিশ্বকাপ বাছাই, ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, মেয়েদের ২০২২ বিশ্বকাপ এবং মেয়েদের ২০২৩ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন ভারতের ২০২৩ বিশ্বকাপে।

ভারতের ১ জন 

নিতিন মেনন
বয়স : ৩৯। পুরুষদের ক্রিকেটে ১৮টি টেস্ট, ৪৪টি ওয়ানডে, ৪০টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১০টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। মেয়েদের ২০১৮ ও ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচালনা করেছেন ২০১৯ আইপিএলের ফাইনাল। এবার প্রথম বারের মতো সুযোগ পাচ্ছেন পুরুষদের বিশ্বকাপে।

পাকিস্তানের ১ জন

আহসান রাজা
বয়স ৪৯। পুরুষদের ক্রিকেটে ৮টি টেস্ট, ৪৫টি ওয়ানডে, ৭৪টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১২টি ওয়ানডে ও ১৬টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, মেয়েদের ২০১৮ ও ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ টি-টোয়েন্টি বাছাই টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। পুরুষ-নারী মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ডাক পেয়েছেন এবারই প্রথম।

শ্রীলঙ্কার ১ জন

কুমার ধর্মসেনা
বয়স ৫২। পুরুষদের ক্রিকেটে ৭৯টি টেস্ট, ১১৮টি ওয়ানডে, ৪২টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১টি ওয়ানডে পরিচালনা করেছেন। ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচালনা করেছেন ২০১৫, ২০১৯ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল! এবার পরিচালনা করতে যাচ্ছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১ জন

জোয়েল উইলসন
বয়স ৫৬। পুরুষদের ৩৪টি টেস্ট, ৮৫টি ওয়ানডে, ৪৩টি টি-টোয়েন্টি এবং মেয়েদের ১৩টি ওয়ানডে ও ১৬টি টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন। আম্পায়ারিং করেছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে। এবার অপেক্ষা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের পরিচালনা করার।

৪ ম্যাচ রেফারি

জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)
বয়স ৫৪। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ২০০৬ সালে আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করেন ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন। সেই থেকে এ পর্যন্ত ৬৩টি টেস্ট, ২২৯টি ওয়ানডে ও ১১২টি টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ রেফারির গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন।

রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বয়স ৬১। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। তার আগে অধিনায়ক হিসেবে অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখান। তার ৪ বছরের অধিনায়কত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারে মাত্র একটা সিরিজ-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। যাই হোক, খেলা ছাড়ার পর যোগ দেন ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে। ২০১৫ সালে আইসিসির ম্যাচ রেফারিদের এলিট তালিকায় নাম লেখান। সেই থেকে ৪০টি টেস্ট, ৭৪টি ওয়ানডে ও ৬৯টি টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন।

জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড)
বয়স ৬৫। ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এই কিউই আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে যোগ দেন ২০০৪ সালে। নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত মার্টিন ক্রোর ভাই সেই থেকে ১১১টি টেস্ট, ৩০৪টি ওয়ানডে ও ১৬২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন।

অ্যান্ডি পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে)
বয়স ৬৭। ১৯৯২ সালে খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে নাম লেখানো পাইক্রফট ২০০৯ সালে অন্তর্ভুক্ত হন আইসিসির ম্যাচ রেফারিদের এলিট তালিকায়। সেই থেকে এ পর্যন্ত ৮৬টি টেস্ট, ২০০টি ওয়ানডে ও ১২৯টি টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //