বিশ্বকাপ ক্রিকেট দল পরিচিতি: বাংলাদেশ

অংশগ্রহণ: ৭ (এবার নিয়ে)
সেরা সাফল্য: ১ বার কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৫)
মোট ম্যাচ : ৪০
জয়: ১৪
হার: ২৫
নো রেজাল্ট: ১

২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলটা কেমন হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে সবার জানা একটা বিষয়ই উল্লেখ করা জরুরি মনে হচ্ছে। ভারতের মাটির আসন্ন বিশ্বকাপে যে ১০টি দল অংশ নিচ্ছে, তার মধ্যে সবার শেষে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সেটা আবার বিশ্বকাপ খেলতে ভারতের পথে রওনা হওয়ার আগের রাতে! টিম ম্যানেজমেন্ট একটা অহেতুক ‘পরীক্ষা পরীক্ষা’ খেলা খেলার কারণেই দল ঘোষণায় দেরি। আর সেই দেরির পর তামিম ইকবালকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল মহানাটক। যে নাটকের সারমর্ম- তামিম ইকবাল বাদ। গত জুলাই মাসেও যার নেতৃত্ব বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার বিষয়টি সাধারণ ব্যাপার ছিল, সেই তামিম বিশ্বকাপ দলে নেই। আধা-ফিট তামিমকে নেওয়া হয়নি। যাকে নিয়ে আলোচনাটা বেশি ছিল সেই মাহমুদউল্লাহকে অবশ্য রাখা হয়েছে। ১৫ সদস্যের দলের বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা আছে ৭ জনের। বাকি ৮ জনই বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো।

কিন্তু তামিমকে বাদ দিয়ে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে যে দলটা গঠন করা হয়েছে, তা কি সব দিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ? দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন, ওপেনিংয়েই রয়ে গেছে বড় ঘাটতি। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে দলে স্পেশালিস্ট ওপেনার মাত্র দুজন! লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। এর মধ্যে লিটন ফর্মে নেই, রান-খরার জন্য নিজেই হতাশার কথা প্রকাশ করেছেন। আর তরুণ তানজিদ হাসান তামিমের মাত্রই অভিষেক হয়েছে, খেলেছেন মাত্র ৫ ম্যাচ। এবং তাতে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স এতটাই হতাশাজনক যে, তার ওপর ভরসা করার উপায় নেই। ৫ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৩৪ রান! ডাক মেরে শুরু, সর্বোচ্চ ইনিংস ১৬ রানের। 

এমন একজনকে বিশ্বকাপের অপরিহার্য ওপেনার হিসেবে নেওয়া এবং কোনো বিকল্প না রাখাটা হাস্যকরই, চিন্তারও। দলে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান মাত্র ৫ জন- লিটন, তানজিদ হাসান, নাজমুল হোসেন, মুশফিকুর রহিম ও তাওহিদ হৃদয়। বিপরীতে পেস বোলারই ৫ জন! তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরীফুল, হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান সাকিব। বাকি ৫ জন 

স্পিন-অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ। এই বিষয়টিও হাস্যকরই। স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের কেউ একজন চোটে পড়লে বা ব্যর্থ হলে, ব্যাটিং লাইনআপ সাজাতে হবে জোড়াতালি দিয়ে। অথচ গত কিছুদিন ধরেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভুগছে দল। সুতরাং দলের ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তাটা থাকছেই; কিন্তু কি আর করার। ওই দুশ্চিন্তাকে সঙ্গে নিয়েই বুক বাঁধতে হবে আশায়।

দলীয় সর্বোচ্চ: ৩৩৩/৮, ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, নটিংহামে
দলীয় সর্বনিম্ন: ৫৮, ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, মিরপুরে

ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ১২৮*

২০১৫ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক আগের ম্যাচটিতেই বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলকে ১৫ রানের জয় পাইয়ে দেওয়া ম্যাচটিতে খেলেছিলেন ১০৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের পরের ম্যাচে আবার সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথমে ব্যাট করে দলকে ৭ উইকেটে ২৮৮ রানের পুঁজি পাইয়ে দেওয়ার পথে এবার খেলেন অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস। ১২৩ বলের ইনিংসটিতে ৩টি ছক্কা ও ১২টি চারে ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন তিনি। 

ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: সাকিব আল হাসান, ৫/২৯

বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচে সেরা বোলিং রেকর্ডটি সাকিব আল হাসানের দখলে। কীর্তিটা তিনি গড়েন ২০১৯ বিশ্বকাপে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে, সাউদাম্পটনে। ২৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা আফগানিস্তানকে ২০০ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে সাকিব ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তার আগে দলকে ৭ উইকেটে ২৬২ রানের পুঁজি এনে দেওয়ার পথে ব্যাট হাতেও ৫১ রান করেছিলেন সাকিব। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি উঠেছিল তার হাতেই। ওই ২০১৯ বিশ্বকাপেই মুস্তাফিজুর রহমান দুবার ৫ উইকেট লাভের কৃতিত্ব দিয়েছেন। তবে দুবারই তিনি সাকিবের চেয়ে রান দিয়েছেন বেশি।

বিশ্বকাপ দল: লিটন কুমার দাস (উইকেটরক্ষক), তানজিদ হাসান তামিম, নাজুমল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।

সাকিব আল হাসান
ক্রিকেট মাঠে সাকিব আল হাসান কি করতে পারেন, ক্রিকেট দুনিয়া ভালো করেই জানে। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ দলের সেরা তারকা তিনি। দলের সবচেয়ে বড় ভরসাও। আসন্ন বিশ্বকাপে তার কাঁধেই থাকছে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরু দায়িত্ব, দলের সবচেয়ে বড় কাণ্ডারিও। বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাতেও পরিপূর্ণ। ২০০৭ থেকে শুরু করে গত ৪টি ওয়ানডে বিশ্বকাপেই খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের ৪ আসর মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই বাঁহাতি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে ৮২.২৬ স্ট্রাইক রেটে ৪৫.৮৪ গড়ে করেছেন ১১৪৬ রান। আছে ২টি শতক ও ১০টি অর্ধশতক। বল হাতে নিয়েছেন ৩৪টি উইকেট। আসন্ন বিশ্বকাপেও তিনিই হতে পারেন বাংলাদেশের তরুপের তাস।

চন্ডিকা হাতুরুসিংহে
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছেন   চন্ডিকা হাতুরুসিংহে। ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে  বাংলাদেশ পায় নজরকারা সাফল্য। তবে হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরে। হারতে হয়েছে আফগানিস্তানের সঙ্গে জুলাইয়ে ওয়ানডে সিরিজ। মার্চ-এপ্রিলে ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটের সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যদিও ইনজুরি সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ সেপ্টেম্বরে এসিসি এশিয়া কাপে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি; কিন্তু বিশ্বকাপে হাথুরুর শিষ্যরা ঘুরে দাঁড়াবে, প্রত্যাশা সকলের। 

বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ অ্যালেন ডোনাল্ড। স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ।



সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //