অংশগ্রহণ: ১৩ বার
সেরা সাফল্য: ১ বার, চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৬)
মোট ম্যাচ: ৮০
জয়: ৩৮
হার: ৩৯
টাই: ১
নো রেজাল্ট: ২
ভারতের মাটির ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য শ্রীলঙ্কা দলটি কেমন হয়েছে? দলটি কত দূর যেতে পারবে? প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিলেই এই প্রশ্ন দুটির বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া ১০ দলের মধ্যে সবচেয়ে দেরিতে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে। শ্রীলঙ্কা দল দিয়েছে ঠিক তার আগের দিন, ২৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের মতো নাটকীয়তার জন্ম দিতে নয়, দল ঘোষণায় শ্রীলঙ্কার বিলম্বের কারণ ছিল চোট শঙ্কা। দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের অনেকেই চোটগ্রস্ত ছিল। তাই শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। সেই অপেক্ষার পরও লঙ্কানরা বিশ্বকাপে দলে পায়নি অন্যতম সেরা পেসার দুশমান্থা চামিরা, স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মিডিয়াম পেসার চামিকা করুনারত্নেকে, যা শ্রীলঙ্কার জন্য বড় ধাক্কা। নিজেদের হারিয়ে খোঁজা শ্রীলঙ্কার দলটি অভিজ্ঞতার দিক থেকেও অনেকটা পিছিয়ে। ১৫ সদস্যের দলের মাত্র ৫ জনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ১০ জনই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো। এই অনভিজ্ঞদের দলে আছেন অধিনায়ক দাসুন শানাকাও। অভিজ্ঞতার ঘাটতি বোলিং আক্রমণেই বেশি। পেসারদের মধ্যে একজনেরও বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নেই!
দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও খুব আশাব্যাঞ্জক নয়। যদিও ২০২৩ সালে ২২টি ওয়ানডে খেলে ১৪টিতেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, হেরেছে মাত্র ৮টিতে। তবে সেই ১৪ জয়ের ১২টি জয়ই বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ওমান, আরব আমিরাতের মতো দলের বিপক্ষে। বাকি দুটি জয়ের একটি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অন্যটি পাকিস্তানের বিপক্ষে। এছাড়া ৮টি হারই বড় দলের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে ৫টিতেই হেরেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই হার, অন্য হারটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই চিত্র নিশ্চিতভাবেই লঙ্কানদের বড় স্বপ্নের জাল বুনতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে বিশ্বকাপ যেহেতু ভারতের মাটিতে, যা তাদের নিজেদের কন্ডিশনেরই মতো, সুতরাং লঙ্কানদের একেবারে ফেলে দেওয়ার উপায় নেই। তাছাড়া অনভিজ্ঞ হলেও দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণই। দিমুথ করুনারত্নে, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিসাঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, দাসুন শানাকাদের সমন্বয়ে গড়া ব্যাটিং লাইনআপ ভরসা করার মতোই। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালাঙ্কা, দুশান হেমান্থারা বল-বল, দুইভাবেই ভূমিকা রাখতে পারেন। পেস বোলিংয়ে লাহিরু কুমারা, মাথিশা পাথিরানা, মাহিশ থিকশানা, দিলশান মাদুশাঙ্কারাদের সামর্থ্য আছে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়ার। কাসুন রাজিথা ও দুনিথ ভেল্লালাগে স্পিন ভেল্কিটাও ভালোই দেখাতে পারেন।
দলীয় সর্বোচ্চ: ৩৯৮/৫, কেনিয়ার বিপক্ষে, ক্যান্ডিতে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে
দলীয় সর্বনিম্ন: ৮৬, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ম্যানচেস্টারে ১৯৭৫ বিশ্বকাপে
বিশ্বকাপ দল: দিমুথ করুনারত্নে, কুশল পেরেরা (উইকেটরক্ষক), কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), পাথুম নিসাঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা (উইকেটরক্ষক), চারিথ আসালাঙ্কা, দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দুশান হেমান্থা, লাহিরু কুমারা, মাথিশা পাথিরানা, দিলশান মাদুশাঙ্কা, কাসুন রাজিথা, মাহিশ থিকশানা ও দুনিথ ভেল্লালাগে।
ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: তিলকরত্নে দিলশান, ১৬১*
শ্রীলঙ্কান ওপেনার এই ইনিংসটা খেলেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৫ বিশ্বকাপে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। তার ১৪৬ বলে ১৬১ রানের অপরাজিত ইনিংসে চড়ে ১ উইকেটে ৩৩২ রান করে শ্রীলঙ্কা। ২২টি চারে সাজানো ইনিংসটির পথে তিলকরত্নে দিলশান ওপেনিংয়ে লাহিরু থিরিমান্নের সঙ্গে ১২২ রানের এবং দ্বিতীয় উইকেটে কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ২১০ রানের জুটি। সাঙ্গাকারাও তুলে নেন সেঞ্চুরি, অপরাজিত থাকেন ১০৫ রান করে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের এই ইনিংসটি দিলশানের ওয়ানডে ক্যারিয়ারেরও সেরা। পরে বাংলাদেশকে ২৪০ রানে অলআউট করে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতে ৯২ রানে। ম্যাচসেরার পুরস্কারটি নিজের পকেটে পোরেন দিলশান।
ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: চামিন্দা ভাস, ৬/২৫
ভাস কীর্তিটা গড়েছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে, পিটারমরিজবার্গে। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠানো বাংলাদেশকে অগ্নিঝরা বোলিংয়ে একাই পুড়িয়ে ছারখার করেন ভাস। প্রথম ওভারেই তুলে নেন হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট। এর মধ্যে হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহনসানুল হককে ভাস উপহার দেন ‘গোল্ডেন ডাক’। স্কোর বোর্ডে রান ওঠার আগেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সানোয়ার হোসেন এসে চতুর্থ বলে ৪ মারলেও ভাসের পঞ্চম বলেই আউট হন। ৪ উইকেট হারিয়ে ভাসের প্রথম ওভারেই ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ। পরে ভাসও ২ উইকেট ঝুলিতে পোরেন। ৯.১ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন। বাংলাদেশ কোনো রকমে ৩১.১ ওভার ব্যাটিং করে ১২৪ রানে অলআউট হয়। পরে শ্রীলঙ্কা বিনা উইকেটেই ২১.১ ওভারে করে ফেলে ১২৬। ম্যাচসেরা যে ভাস, সেটি কি আর বলতে হবে!
দাসুন শানাকা
২০১৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর দাসুন শানাকা এ পর্যন্ত খেলেছেন ৬৭টি ম্যাচ। তার ৩৯টি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারতের মাটির বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার নেতৃত্ব ভারও শানাকার কাঁধেই। গত মাসে ভাঙাচুরা দল নিয়েও শ্রীলঙ্কাকে এশিয়া কাপের ফাইনালে তুলেছিলেন শানাকা। যদিও ফাইনালে ভারতের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। সেই হতাশা মুছে শ্রীলঙ্কার সামনে সুযোগ বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করে দেখানোর। সেটা করতে হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে শানাকাকেই। এমনিতে দলে তার কাজটা কঠিন। ৫, ৬, ৭ বা কখনো কখনো ৮ নম্বরেও ব্যাটিং করতে হয় তাকে। এমন পজিশনে নেমে লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ একেবারেই কম। তারপরও ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরি আছে তার। তবে শানাকার সাম্প্রতিক ফর্ম খুবই খারাপ। গত ১০ জানুয়ারি ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরির। তারপর গত ২১ ম্যাচের ১৭ ইনিংসে ব্যাট করে সর্বোচ্চ ইনিংস ৩১ রানের! এই সময়ে ডাক মেরেছেন তিনবার। তার একটি এশিয়া কাপের ফাইনালে।
ক্রিস সিলভারউড
২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রিস সিলভারউডকে। তার অধীনে আট বছর পর প্রথম শিরোপার মুখ দেখে শ্রীলঙ্কা। জিতে নেয় ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ। সিলভারউড ইংল্যান্ডের হয়ে ছয়টি টেস্ট আর সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। কাজ করেছেন ইংল্যান্ড দলের প্রধান কোচ হিসেবেও। এমনকি, ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেওয়া হয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাচকের পদ। ২০২২ সালের এপ্রিলে অ্যাশেজ সিরিজে ০-৪ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারার লজ্জা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। পরবর্তীতে দায়িত্ব নেন শ্রীলঙ্কার।
শ্রীলঙ্কা দলে নাভিদ নেওয়াজকে দেওয়া হয়েছে সিলভারউডের সহকারীর দায়িত্ব। লঙ্কান দলের স্পিন বোলিং কোচ পিয়াল উইজেতুঙ্গে আর ফাস্ট বোলিং কোচ দর্শনা গামাগি। ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যান্টন রক্স। কিংবদন্তি ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনাকে রাখা হয়েছে শ্রীলঙ্কা দলের কনসালট্যান্টের দায়িত্বে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh