বিশ্বকাপ ক্রিকেট দল পরিচিতি: ভারত

অংশগ্রহণ: ১৩ বার
সেরা সাফল্য: ২ বার চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৩ ও ২০১১)
মোট ম্যাচ: ৮৪
জয়: ৫৩
হার: ২৯
টাই: ১
নো রেজাল্ট: ১

সোনায় সোহাগা বলতে যা বোঝায়, বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতের অবস্থা যেন ঠিক তাই। নিজেদের ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ। গ্যালারি ভর্তি দর্শকের প্রাণান্তর সমর্থন-অনুপ্রেরণাসহ স্বাগতিক সব সুবিধাই পাবে তারা। দলে নেই কোনো চোট শঙ্কা। বরং দলের সেরা তারকাদের মধ্যে আগে যারা চোটে ছিল, তারাও সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ফলে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই ঘরের মাটির বিশ্বকাপ ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছে রোহিত শর্মার ভারত। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের শিরোপা জেতায় দলের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়েও তাদের জায়গা দুই নম্বরে। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে গড়া বিশ্বকাপের দলটিতে তারকার ছড়াছড়ি। একটা সময় ব্যাটিং-ই ছিল ভারতের প্রধান ভরসা। ব্যাটসম্যানদের কাঁধে চেপেই লড়াই করতে হতো; কিন্তু বর্তমানে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং, স্পিন বোলিং-সব দিক থেকেই সমান শক্তিশালী ভারত। ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুবমান গিল, লুকেশ রাহুল, ইষান কৃষাণ, শ্রেয়াস আইয়ার, সূর্যকুমার যাদব- যে কোনো দলের বোলিং লাইনআপকেই গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। পেস বোলিংয়ে জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে শার্দুল ঠাকুর। স্পিন বোলিংয়ে কুলদ্বীপ যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা। এদের মধ্যে অক্ষর প্যাটেল, জাদেজা ব্যাট হাতেও দলকে জেতাতে সিদ্ধহস্ত। পেস অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া মাঠে কি করতে পারেন, তা সবারই জানা। ১৫ সদস্যের দলের ৮ জনের অভিজ্ঞতা আছে বিশ্বকাপে খেলার। 

তাদের মধ্যে বিরাট কোহলির আবার বিশ্বকাপ জয়েরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১১ সালে নিজেদের ঘরের মাঠেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি খেলেছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপেও। রোহিত শর্মা, লুকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, জাদেজা, বুমরাহ, কুলদ্বীপ, সামিরাও বিশ্বকাপ খেলেছেন। বাকি যে ৭ জন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ নিতে যাচ্ছেন, তারাও নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েই দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ সিরাজ আইসিসি বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে আছেন। শুবমন গিল আছেন ব্যাটিং নম্বরের দুই নম্বরে। এই তথ্যই বলছে তারা কেমন ফর্মে রয়েছেন। দলটির কোচের ভূমিকায় আছেন কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়। নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি দলকে এক ইউনিটে পরিণত করেছেন। পরিপূর্ণ একটা দল হয়েই বিশ্বকাপ যুদ্ধে নামছে ভারত। নিশ্চিতভাবেই টুর্নামেন্টের টপ ফেবারিটদের একটি তারা। ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের ফাইনাল শেষে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবটা রোহিত শর্মারা করতেই পারে।

দলীয় সর্বোচ্চ: ৪১৩/৫, বারমুডার বিপক্ষে, পোর্ট অব স্পেনে, ২০০৭ বিশ্বকাপ

দলীয় সর্বনিম্ন: ১২৫, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সেঞ্চুরিয়নে, ২০০৩ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), ইষান কিষাণ, শ্রেয়াস আইয়ার, বিরাট কোহলি, লুকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শুবমন গিল, সূর্য কুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জসপ্রিত বুমরাহ, কুলদ্বীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ সামি ও শার্দুল ঠাকুর।

ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: সৌরভ গাঙ্গুলি, ১৮৩

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা করে নিলেও বিশ্বকাপে সৌরভ গাঙ্গুলির খুব বেশি কীর্তি নেই। তবে ভারতের পক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিংয়ের রেকর্ডটা ঠিকই নিজের দখলে রেখেছেন কলকাতার মহারাজ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টনটনে ১৮৩ রানের ইনিংসটা খেলেন তিনি। ৭টি ছক্কা ও ১৭টি চারের সহায়তায় ১৫৮ বলের ইনিংসটির পথে সৌরভ সতীর্থ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৩১৮ রানের জুটি। জুটির পথে রাহুল দ্রাবিড়ও খেলেন ১২৯ বলে ১৪৫ রানের ইনিংস। ভারত গড়ে ৬ উইকেটে ৩৭৩ রানের পুঁজি। পরে শ্রীলঙ্কাকে ২১৬ রানে অলআউট করে ভারত মাচটা জিতে ১৫৭ রানে।

ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: আশিস নেহরা, ৬/২৩

কুম্বলে, হরভজন, অশ্বিনরা নন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের ম্যাচসেরা বোলিংয়ের কীর্তিটা আশিস নেহরার দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ইংল্যান্ডকে ১৬৮ রানে গুঁড়িয়ে দিতে ১০ ওভারে মাত্র ২৩ রান খরচায় ৬ উইকেট নিয়েছিলেন নেহরা। প্রথমে ব্যাট করে ৯ করে মাত্র ২৫০রান করার পরও তাই ভারত ম্যাচটা জিতে নেয় ৮২ রানে। ডারবানের কিংসমিড স্টেডিয়ামে সেদিন সত্যিই বল হাতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝরিয়েছিলেন বাঁ-হাতি পেসার আশিস নেহরা।

রোহিত শর্মা
ব্যাটসম্যান হিসেবে নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা। ব্যাট হাতের কারিগর রোহিত শর্মার নেতৃত্ব গুণও দারুণ। এরই মধ্যে ভারতকে ৩৩টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে ২৪টি ম্যাচেই ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন। হার মাত্র ৮ ম্যাচে। বাকি একটিতে ফল হয়নি। ওয়ানডেতে শতকরা জয়ের হারে তিনিই ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে এরই মধ্যে এশিয়া কাপের শিরোপাও জিতিয়েছেন রোহিত। গত মাসে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাওয়া সেই শিরোপা-সাফল্যের সুখ স্মৃতি নিয়েই নিজেদের ঘরের মাটির বিশ্বকাপ খেলতে নামছে ভারত। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব রোহিতের কাঁধেই। এর আগে দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন রোহিত। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডের মাটির ২০১৯ বিশ্বকাপে তো ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ঝড় তুলেছিলেন। ৯ ম্যাচ খেলে করেছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬৫৯ রান। সেঞ্চুরি করেছিলেন ৫টি! গড়েছিলেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড। সব মিলে বিশ্বকাপে ১৭ ম্যাচে করেছেন ৯৭৮ রান। এবার সুযোগ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করে দেশকে শিরোপার আনন্দে ভাসানোর।

রাহুল দ্রাবিড়
ভারতের  ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রাহুল দ্রাবিড়। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে ২৪ হাজারের বেশি রানের মালিক। টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো ‘দা ওয়াল’খ্যাত দ্রাবিড় ভারতের হয়ে ২০০২ সালে জিতেছেন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। খেলোয়াড় দ্রাবিড় অবসরের পর  ২০১৪ সালে আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০১৮ সালে দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে ভারত জিতেছে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। 

ভারতের জাতীয় একাডেমির সাবেক প্রধান দ্রাবিড় রোহিত শর্মাদের দায়িত্ব পেয়েছেন  ২০২১ সালের  নভেম্বরে। রবি শাস্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ২০২৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ দ্রাবিড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। যদিও সদ্যই দলকে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতিয়েছেন। তবে ২০২২ সালের এশিয়া কাপের  ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় দ্রাবিড়ের দল। চলতি বছরেই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ‘মেন ইন ব্লু’রা। তবে নিজেদের মাটিতে শিরোপা জিতলে দ্রাবিড় হবেন দেশকে যুব আর মূল বিশ্বকাপ জেতানো প্রথম কোচ। 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //