ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ

ক্রিকেটের চেয়ে বড় যে লড়াই

নানা কারণেই যুগের পর যুগ ধরে বৈরী সম্পর্ক ভারত-পাকিস্তানের। দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক গণ্ডিছাড়িয়ে যা গড়িয়ে থাকে ক্রিকেট ম্যাচ পর্যন্ত। বাদ যায়নি ফুটবল, হকি কিংবা অন্যান্য খেলাও। তবে ক্রিকেটে দ্বৈরথটা যেভাবে আঁচ করা যায় অন্য কোনো খেলায় সেভাবে দেখা কিংবা বোঝা যায় না। ১৪ অক্টোবর এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তেমনি এক লড়াই ছিল। যেখানে ভারত ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। কিন্তু মাঠে এক পেশে লড়াই হলেও মাঠের বাইরে গত কয়েক মাসে যা ঘটে গেছে তাতে মনে হয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ ছিল এটি। এই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে ভারত টানা জয়ের সংখ্যাটা ৭ থেকে ৮ হয়েছে। 

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম যেন আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হোটেলে বন্দিজীবন, নকল টিকিটের দায়ে চারজন গ্রেপ্তার, হোটেলে জায়গা না পেয়ে দর্শকদের হাসপাতালে অবস্থান নেওয়া, ম্যাচের আগে বর্ণিল অনুষ্ঠান, নিরাপত্তার জন্য ১২ জন দর্শকের জন্য একজন পুলিশ আর বিশেষ ট্রেন সার্ভিস।

একটি ম্যাচের জন্য আর কী হতে পারে? অনেকের কাছে তো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়েই নাকি বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। এই দুই দল ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৭৩ বার জয় পেয়েছে পাকিস্তান, ৫৭ বার জয় পেয়েছে ভারত। মোট লড়াইয়ে পাকিরা এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপে একক আধিপত্য ভারতের। আটবারের লড়াইয়ে আটবারই জয় পেয়েছে ভারত। বড় টুর্নামেন্ট হলেই ভারতের বিপক্ষে ভেঙে পড়ে পাকিস্তান। এ ধারণাটা অবশ্য ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বদলে দেন বাবর আজমের দল। ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। তবে ২০১৭ সালের পর আর ভারতকে হারাতেও পারেননি বাবররা। 

বিশ্বকাপে ১০টা দলই খেলছে নাকি দুটি, এই প্রশ্ন করেছেন কেউ কেউ। কারণ আহমেদাবাদে যা অবস্থা ছিল, তাতে বলতেই হয় সেখানে ভারত-পাকিস্তানই প্রথম ও শেষ কথা। শহরে দর্শকদের জায়গা দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। হোটেলে কক্ষ খালি নেই, যদিও বা পাওয়া গেছে সেগুলোর ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে ১০ গুণ কিংবা তারও বেশি। উপায়ান্তর না দেখে নতুন কৌশল নিয়েছিলেন এই হাইভোল্টেজ ম্যাচ দেখতে শহরে আসা দর্শকরা। রোগী সেজে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্টেডিয়ামে ১ লাখ ৩২ হাজার আসন সংখ্যাও যেন এই ম্যাচের জন্য অনেকটা অপ্রতুল হয়ে পড়ে। আনুষ্ঠানিক টিকিট বিক্রি আগেই শেষ হলেও কালোবাজারে আট-দশ গুণ বেশি দামে পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় ম্যাচের আগে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছিলেন, ‘যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই তা নিয়ে ভেবে খেলা থেকে মনোযোগ নষ্ট করতে চাই না আমরা। মাঠে আমরা কীভাবে কী করব সেটিতেই এখন পুরো মনোযোগ।’

বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে ভিসা পেতে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সমস্যা হলেও আতিথেয়তায় যেন সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছিল ভারত। নিরাপত্তার বাড়তি চাদর পাকিস্তানকে বরং অস্বস্তিতেই ফেলেছিল। মাঠে নামার আগে আহমেদাবাদে তাদেরকে একরকম বন্দিজীবনই কাটাতে হয়েছে। বাবর আজমের দলকে আহমেদাবাদের যত্রতত্র না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কেনাকাটা বা কোথাও একক কিংবা দল বেঁধে খেতে-বেড়াতে যাওয়ার ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //